পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

লাফিয়ে ভাঙার মানুষকে কামড়ে দেওয়া তার পক্ষে কিছুই আশ্চর্য নয়। আর যেখানে কামড়ে ধরে, সেখানের খানিকটা ছিড়ে না আসা পর্যন্ত সে কামড় ছাড়ে না। তার উপর এরা। সব সময় দল বেঁধে ফেরে। হাঙর কুমির যেখানে থাকে সেখানেও নাকি মাছ থাকে, নানারকম জলজ থাকে। কিন্তু ‘পিরাই’-এর আড্ডা যেখানে তার ত্রিসীমানার মধ্যে কোনো প্রাণীর থাকবার জো নেই। সেখানকার জলে যদি গোরু ঘোড়া নামে তবে তারা আর আন্ত ফেরে না। একবার একটা ষাঁড় কুড়ি-পঁচিশ হাত চওড়া একটা নদী পার হতে গিয়েছিল কিন্তু বেচারার আর পার হওয়া হল না। তার আগেই রাক্ষুসে মাছেরা তাকে খেয়ে শেষ করে দিল। এরকম দুর্ঘটনা অনেক জানোয়ারের ভাগ্যেই ঘটে থাকে—তার মধ্যে মানুষও বাদ পড়ে নি। হাজার মাছে একসঙ্গে কামড় দেয় আর এক-এক কামড়ে এক-এক খাবল মাংস উঠিয়ে আনে। দু-চার মিনিটের মধ্যে এক-একটা জানোয়ারকে খেয়ে শেষ করে দেয়।

 কত সময় এমন হয় যে, লোকে নদীতে জল আনতে গেছে হঠাৎ কে তার হাত কেটে নিল। জানোয়ারেরা জল খেতে এসেছে—কট করে তার নাক কেটে গেল। সেদেশের লোকে জানে এ পিরাই মাছের কাণ্ড!

সন্দেশ—আষাঢ়, ১৩২২


  ফড়িং পাওয়া যায় না, এমন দেশ খুব কমই আছে। যেদেশে লতাপাতা আছে আর সবুজ মাঠ আছে, সেদেশেই ফড়িং পাওয়া যাবে। নানান দেশে নানানরকমের ফড়িং তাদের রঙ এবং চেহারাও নানানরকমের, কিন্তু একটি বিষয়ে সবারই মধ্যে খুব মিল দেখা যায়। সেটি হচ্ছে লাফ দিয়ে চলা। এই বিদ্যায় ফড়িঙের একটু বিশেষরকম বাহাদুরি দেখা যায়, কারণ অন্যান্য অনেক পোকার তুলনায় ফড়িঙের চেহারাটি বেশ বড়োই বলতে হবে। আরো অনেক বড়ো পোকা আছে, যেমন আরশুলা, যারা একটু-আধটু লাফাতে পারে; কিন্তু তাদের লাফানির চাইতে উড়বার ঝোঁকটাই বেশি। ফড়িঙের যদিও ডানা আছে, কিন্তু সেটা সে ঠিক উড়বার জন্য অর্থাৎ বাতাস ঠেলে উঠবার জন্য ব্যবহার করে। তাতে কেবল লাফ দিবার সময় বাতাসে ভর করে শরীরটাকে কিছু হালকা করার সুবিধা হয় মাত্র। ফড়িঙের শরীরটা দেখলেই বোঝা যায় যে, ঐরকম লাফ দিবার আয়োজন করেই তাকে গড়া হয়েছে। তার শরীরের ভিতরটা বাতাসে পোরা বললেও হয়—অন্য। কোনো পোকার মধ্যে এতগুলা ফাপা নল প্রায়ই দেখা যায় না। শরীরটা হালকা হওয়ায় বির সুবিধা হয় তা সহজেই বুঝতে পার। তার উপর ফড়িঙের পা দুটিতেও একটু বিশেষরকমের কেরামতি আছে। পায়ের অগাটি যেন বঁড়শির মতো বাঁকানো। সাফাবার সময় সে ঐ বঁড়শি দিয়ে সুবিধামতো গাছের ডালপালা কিছু একটা বেশ করে আঁকড়িয়ে ধরে। তার পর পা-টাকে জোর করে গুটিয়ে হঠাৎ টান ছেড়ে দেয়, আর সেইসঙ্গে সমস্ত শরীরটা ধনকের ছিলার মতো ছিটকিয়ে যায়। এরকম সাংঘাতিকভাবে লাফাতে গিয়ে যাতে হাত-

৩০২
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২