পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পা জখম না হয়, তার জন্যও ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথম ব্যবস্থা, তার ডানা দুটি। লাফ দিয়ে পড়বার সময় ঐ ডানার উপর ভর দিয়ে সে লাফানির ঝুঁকিটা সামলিয়ে নেয়। তার পর সামনের পাগুলোর অগায় যে পুঁটুলি রয়েছে ঐগুলোতে পড়বার চোট কমিয়ে দেয়। ফড়িঙের ইংরাজি নামটিতেও তার ঐ লাফানির পরিচয় পাওয়া যায়। (Grasshopper অর্থাৎ যিনি ঘাসের উপর লাফিয়ে বেড়ান’)।

 মাঠের মধ্যে ফড়িঙের ‘চির-চির' শব্দ অনেক সময়ে খুব স্পষ্ট শোনা যায়। এই আওয়াজটি কিন্তু তার গলা থেকে বেরোয় না—তার যন্ত্রটি থাকে ডানার মধ্যে। ডানা দুটির গোড়া 'উকা’র মতো খড় খড়ে দুটি সরু তাঁতের উপর একটি পাতলা 'চামড়া’র ছাউনি। ঐ তাঁতের ঘষাঘষিতে আওয়াজ হয় আর ঐ পাতলা চামড়াটিতে সেই আওয়াজটাকে বাড়িয়ে তোলে। এইরকম আওয়াজ করে তাদের কি লাভ হয়? একটা লাভ হয় এই যে তারা এমনি করে পরস্পরকে ডাকতে পারে। ভালো খাবার পেলে বা মনে খুব ফর্তি হলেও তারা। ভয় পেলে চুপ করে থাকে। আশ্চর্য এই যে, স্ত্রী ফড়িংদের আওয়াজ নাই। কিন্তু তাদের 'কান’ খুব ভালো।

 'কান’ বললাম বটে, কিন্তু একটা ফড়িং ধরে যদি তার কান খুঁজতে যাও, হয়তো খুঁজেই পাবে না। কারণ কানটি থাকে তার হাঁটুর কাছে না হয় পিঠের উপর। কানেরও আবার নামান রকম-বেরকম আছে। কোনোটা একেবারে খোলা দুটো পাতলা চামড়ার খোলা, কোনোটা গর্তের মধ্যে ঢুকিয়ে বসানো—কোনোটার মুখে রীতিমতো ঢাকনি দেওয়া।

সন্দেশ-শ্রাবণ, ১৩২৩


পেকারি

  ‘পেকারি’ কি জান? দক্ষিণ আমেরিকায় একরকম শুয়োর আছে তার নাম পেকারি। আমাদের দেশী এক-একটা বড়ো-বড়ো বরাহের কাছে পেকারি যেন কুকুরের পাশে ইঁদুরটা। বেশ বড়ো একটি পেকারি হয়তো একটি সাধারণ ছাগলের চাইতে বড় হবে না। কিন্তু পেকারিকে ভয় করে না, এমন জানোয়ার সেদেশে কম আছে। তার কারণ পেকারিরা সব সময় বড়ো-বড়ো দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। এক-একটা দলে এক-এক সময় চল্লিশ-পঞ্চাশটা পর্যন্ত পেকারি থাকতে দেখা যায়।

 পেকারির প্রধান শত্রু ‘জাগুয়ার'। যতরকম চিতে বাঘ আছে তার মধ্যে এই জাগুয়ারই ইতে বড়ো আর ভয়ানক। কিন্তু পেকারির দল সামনে পড়লে জাগুয়ার পর্যন্ত মানে মানে পথ ছেড়ে পালায়। একবার একদল সাহেব দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে শিকার করতে গিয়েছিলেন। হঠাৎ একটা প্রকাণ্ড ঝোপের মধ্যে থেকে এমনি ভয়ানক ফোঁস ফোঁস ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দ আসতে লাগল যে, তারা ব্যস্ত হয়ে চটপট গাছে উঠে পড়লেন। উচুতে উঠে তাঁরা দেখেন, একটা ভাঙা গাছের ডালের উপর এক জাগুয়ার চড়ে বসেছে—আর তার চারিদিকে পেকারির দল ভয়ানক গোল বাধিয়ে তুলেছে। জাগুয়ারটা যেখানে বসেছে, ততদূর পর্যন্ত

জীবজন্তুর কথা
৩০৩