পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তেড়ে এসে এমনি সাজা দিয়েছিল যে সাহেব বন্দুক নিয়ে ছুটে না আসলে সেদিন তার তামাশা দেখবার শখ একেবারে জন্মের মতো ঘুচে যেত।

সন্দেশ চৈত্র, ১৩২৩


জানোয়ারের প্রবাস যাত্রী

 গ্রীষ্ম আসিতেছে—তোমরা কতজনে হয়তো এখন হইতেই তাহার কথা ভাবিতেছ। কবে ছুটি হইবে, তার পর কে কোথায় যাইবে, কেমন করিয়া সময় কাটাইবে ইত্যাদি কত কথা। গ্রীমের সময়ে যেদেশে গরম কম সেই দেশে যাইতে ইচ্ছে করে, তাই লোকে সিমলা যায় দার্জিলিং যায় শিলং যায়। এরকমে দেশ ছাড়িয়া পলাইবার ইচ্ছা কেবল যে আমাদেরই হয় তাহা নয়, পশুপক্ষী সকলেরই মধ্যে কিছু কিছু দেখা যায়।

 শীতের দেশের পাখি যাহারা হিমালয়ের উত্তরে সারা বছর কাটায়, তাহারা প্রতি বছর শীতকালে আমাদেরই গরম দেশে হাওয়া খাইতে আসে। কোথায় হিমালয় আর কোথায় এই বাংলা দেশের দক্ষিণ। অথচ বছরের পর বছর কত হাঁস কত বক এই লম্বা পথ পার হইয়া আসে, আবার শীতের শেষে ঠিক নিয়মমতো সময়ে হিমালয় ডিঙাইয়া দেশে ফিরিয়া যায়। কোথা হইতে যে তাহারা এদেশের সন্ধান পায়, আর কেমন করিয়াই-বা এতখানি পথ চিনিয়া আসে, তাহা কে বলিতে পারে? এরকম যাওয়া-আসা পৃথিবীর সর্বত্রই দেখা যায়। গরম দেশের পাখি গ্রীষ্মের ভয়ে ঠাণ্ডা দেশে চলিয়াছে। আবার ঠাণ্ডা দেশের পাখি শীতের তাড়ায় গরম দেশে শীতকাল কাটাইতেছে। আশ্চর্য এই যে, এ-সকল পাখি এমন ভরসার সঙ্গে হিসাবমতো চলাফিরা করে যে, মনে হয় যেন পথঘাট সবই তার জানা আছে। যেখানে পথঘাটের কোনো চিহ্ন নাই, রাস্তা চিনিবার কোনো উপায়ও নাই, সেই অকুল সমদ্রের মধ্যে দিয়াও তাহারা নির্ভয়ে পথ বুঝিয়া চলে। মেঘ বৃষ্টি কুয়াশায় অন্ধকারে কিছুতেই তাহারা পথ ভুলে না। এইরূপে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ পাখি মাস ঋতুর হিসাব রাখিয়া আকাশে পাড়ি দিয়া ফিরে।

 এ তো গেল পাখির কথা। বড়ো-বড়ো ডাঙার জন্তুও যে এইরূপে দল বাঁধিয়া প্রবাস যাত্রা করে, এরকম তো কত সময়েই দেখা যায়। জেব্রা জিরাফ হাতি হরিণ বুনো মহিষ ইহারা সকলেই সময়মতো এ-বন ও-বন ঘুরিয়া বেড়ায়। আমেরিকার বাইসনগুলি যখন শীতের সময় বড়ো-বড়ো দেশ পার হইয়া সবুজ বন আর তাজা ঘাসের সন্ধানে যাত্রা করে, তখন তাহারা একেবারে মাইলকে মাইল পথ জুড়িয়া চলে। এক সময়ে এই বাইসনের চলাফিরা আমেরিকায় সহজেই দেখা যাইত; কিন্তু নানা কারণে এখন বাইসনের সংখ্যা খুব কমিয়া আসিয়াছে। তাহার মধ্যে মানুষের অত্যাচার খুব একটা বড় কারণ বলিতে হইবে। যখন বড়ো-বড়ো দল গোঁ-ভরে নদীজল ভাঙিয়া মাঠ ঘাট পার হইতে থাকে তখন যাহারা দুর্বল, যাহারা চলিতে পারে না, তাহাদের অনেকে পিছে পড়িয়া যায়। সেই সময়ে নানারকম মাংসাশী জন্তু আসিয়া তাহাদের মারিয়া শেষ করে। কিন্তু তবু মানুষে অত্যাচার যত কথা

জীবজন্তুর কথা
৩১৩
সু.র.স.-২-৩৯