পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হিড়হিড় করে টেনে বার করল। সাপেরা যখন খায় তখন ক্রমাগত গিলতেই থাকে, যা একবার গলায় ঢোকে তাকে আর ঠেলে বার করতে পারে না। কাজেই ছিপের অগীয় বঁড়শি, বঁড়শিতে গাঁথা ব্যাঙ আর ব্যাঙের সঙ্গে সাপ। এমনি করে গোখরোমশাই চার-অনার সরঞ্জামে ধরা পড়লেন। তার পর লাঠিপেটা করে তাকে সাবাড় করতে কতক্ষণ?

 একটা সাপ মারা পড়তেই আরেকটাকে ধরবার জন্য সকলের ভারি উৎসাহ দেখা গেল। কিন্তু একদিন দুদিন করে এক সপ্তাহ গেল, তব সাপ আর ধরা দেয় না। সবাই হয়রান হয়ে পড়ল। সাহেব যখন হতাশ হয়ে পড়েছেন, এমন সময় একটা চাকর দৌড়ে এসে খবর দিল সাপ ধরা পড়েছে। সাহেব ছুটে দেখতে গেলেন, গিয়ে দেখেন সাপ তখনো গর্ত থেকে বেরোয় নি। তাপসী ছিপ নিয়ে টানাটানি করছে। তার পর টানতে টানতে ক্রমে সাপের খানিকটা গর্তের বাইরে এসেছে, এমন সম চাপরাসীর টানে ব্যাঙটা তার গলা থেকে পিছলিয়ে বেরিয়ে এল। আর সাপটাও ফোঁস্ ফোঁস করতে করতে ছুটে আস্তাবলের বাইরে চলল। তখন সবাই তার পিছনে ছুটে লাঠি দিয়ে তাকে আচ্ছা করে পিটিয়ে শেষ করল। কিন্তু কি আশ্চর্য লাঠিপেটা করতেই তার পেটের মধ্যে থেকে কতগুলো ব্যাঙ বেরিয়ে পড়ল। তার মধ্যে দুএকটা তখনো বেঁচে ছিল—একটা তো একটু বাদেই লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে লাগল। সাহেব তো এ কাণ্ড দেখে একেবারে অবাক। সাপের পেটে গিয়েও যে কোনো জন্তু বেঁচে থাকতে পারে, এটা তাঁর জানাই ছিল না। কিন্তু সাহেবের জানা না থাকলেও এটা কিছু নতুন খবর নয়। আমেরিকার শিংওয়ালা সাপের সম্বন্ধেও এইরকম গল্প শোনা যায়। সেই সাপগুলো এমন পেটুকের মতো খায় যে খাবার পরে আর তাদের নড়বার শক্তি থাকে না, তখন তারা যেখানে সেখানে মড়ার মতো পড়ে থাকে। সেখানকার প্রাচীন 'রেড ইণ্ডিয়ান’ জাতির লোক এই সময়ে তাকে দেখতে পেলে তার মাথায় ডাণ্ডা-পেটা করতে থাকে। তার ফলে অনেক সময়েই তার পেট থেকে অস্ত-গেলা জন্তুগুলো সব বেরিয়ে আসে। তার মধ্যে প্রায়ই দু-একটাকে জ্যান্ত পাওয়া যায়।

 যাহোক, সাহেব তো সাপ মারলেন। কিন্তু তখন আবার দেখা গেল যে, আস্তাবলের মেজের নীচে সাপের ছোটো-ছোটো বাচচায় একেবারে ভরতি হয়ে গেছে। এখন উপায় কি? দুটো সাপ মারতেই এত হাঙ্গামা, তবে এতগুলো যখন বড়ো হবে তখন কি হবে। আবার চাপরাসীর ডাক পড়ল। চাপরাসী বলল, “হুজুর, আমি এরও উপায় জানি।” এবারের উপায়টি আরো আশ্চর্য। এবার প্রকাণ্ড বড়ো-বড়ো কোলা ব্যাঙ এনে আস্তাবলে ছেড়ে দেওয়া হল। তারা মহা ফুর্তি করে পেট ভরে খেয়ে খেয়ে সাপের বংশ সাবাড় করে দিল। সাপকে দিয়ে ব্যাঙ খাইয়ে, তার পর ব্যাঙকে দিয়ে সাপ গেলানো। চমৎকার শিকার না?

সন্দেশ—আশ্বিন, ১৩২৪
৩২২
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২