পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 অনেক জাতের পাখি কাদা দিয়েও তাদের বাসা বানায়। আফ্রিকার ফ্লামিঙ্গোর বাসা কাদার তৈরি। একটা ঢিপির মতো কাদা সাজিয়ে তার মাঝে একটা গর্ত করে ফ্লামিঙ্গো ডিম পাড়ে। আরো অনেক জাতের পাখিও কাদার বাসা বানায়। তাদের অধিকাংশই আফ্রিকার।

 তোমরা অনেকেই বোধ হয় কাঠ-ঠোকরা দেখেছ। এরা ঠোঁট দিয়ে ঠোকর মেরে গাছের গায়ে গর্ত করে তার ভিতরে বাসা বানায়। দুষ্টু ছেলেরা ছানা চুরি করার লোভে কাঠ-ঠোকরার বাসার গর্তে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে অনেক সময় সাপের কামড় খায়, কারণ সাপেরা কাঠ-ঠোকরার বাসা ডাকাতি করে অধিকার করতে বড়ো পটু।

সন্দেশ-কার্তিক, ১৩২৪


কুমিরের জাতভাই

 টিকটিকি, গিরগিটি, বহুরূপী, তক্ষক, গোসাপ এরা সকলে হলেন কুমিরের জ্ঞাতিবর্গ। পৃথিবীর যে কোনো দেশে যাও, এঁদের কোনো-না-কোনোটির সাক্ষাৎ পাবেই। কিন্তু সাক্ষাৎ পেলেই যে সবসময়ে তাদের চিনতে পারবে, তা মনে কোরো না। অস্ট্রেলিয়ার সেই কাঁটাওয়ালা ভীষণমূর্তি জানোয়ার যে নিতান্ত নিরীহ গিরগিটি মাত্র, এ কথা আগে থেকে না জানলে কি কেউ বুঝতে পারবে? কেবল চেহারা দেখে যদি এর সম্বন্ধে কোনো মতামত দিতে হয়, তা হলে অনেকেই হয়তো বেচারির উপর অবিচার করবে। সমস্ত শরীরটি এর অস্ত্রে আর বর্মে ঢাকা, কিন্তু মেজাজটি যারপরনাই ঠাণ্ডা। দুপুরের রোদে শুকনো বালির উপর এরা পড়ে থাকে, ভয় পেলে তাড়াতাড়ি বালির মধ্যে ঢুকে যায়। অন্য জন্তুর অনিষ্ট করা দূরে থাকুক, সামান্য একটা পাখি দেখলেই এরা পালাবার জন্য ব্যস্ত হয়। এদের প্রধান খাদ্য পিঁপড়ে। সবচাইতে আশ্চর্য এই যে এক বাটি জলের মধ্যে যদি এই গিরগিটি ছেড়ে দাও, তবে দেখতে দেখতে এর গায়ের চামড়া সমস্ত জলে শুষে নেবে। শুকনো বালিতে থাকে কিনা, সবসময়ে তো স্নানের সুবিধা হয় না, তাই একবার স্নান করলেই সে অনেকদিনের মতো জল বোঝাই করে নেয়।

 এক সবুজ রঙের জন্তু রয়েছে-মাদাগাস্কারের টিকটিকি। এর বিশেষত্বের মধ্যে পায়ের আঙুলগুলি আর গায়ে রঙের বাহার তা ছাড়া রয়েছে বহুরূপী। বহুরূপীর গুণের কথা তোমরা সকলেই জান। তার সমস্ত গায়ের রঙ সে চটপট বদলাতে পারে। চোখে চেয়ে দেখছ তার দিব্যি ঘাসের মতো সবুজ রঙ, হয়তো এক মিনিট বাদেই দেখবে ফ্যাকাশে। তার পর ঘুরে এসে দেখ শুকনো পাতার রঙ কিম্বা সীসার মতো ময়লা। বহুরূপীর চালচলন ভারি অদ্ভুত। এক পা নড়তে হলে অতি সাবধানে ধীরে ধীরে সে পা ফেলে। হয়তো একটা পা অর্ধেকখানা তুলে পাঁচমিনিট চুপ করেই রইল। দেখে মনে হয় যেন পা ফেলবে কি না ফেলবে এর জন্যে তার কত হিসাব আর ভাবনাচিন্তা করতে হচ্ছে। এক সময়ে লোকের বিশ্বাস ছিল—অন্তত বিলাতে শিক্ষিত লোকেও এ কথা বিশ্বাস করত যে বহুরূপীরা

৩২৪
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২