পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 একরকমের অদ্ভুত গিরগিটি আছে যে মনে হয় রাগে একেবারে ফুলে উঠেছে। তার গলায় যে রঙিন ছাতার মতো রয়েছে, সেটা অন্য সময়ে গুটিয়ে গলার চার দিকে পর্দার মতো ঝুলানো থাকে, কিন্তু ভয় বা রাগের সময় খাড়া হয়ে ছাতার মতো ছড়িয়ে পড়ে। তখন তার মুখের চেহারাটিও ভয়ানক হয়ে ওঠে। লাল ছাতার নীচে আগুনের মতো চোখ, তার উপর ঐরকম ধারালো দাঁত আর টকটকে জিভ—আর সেই সঙ্গে ফোঁস্ ফোস্ শব্দ করে লাফিয়ে ওঠা—এতে বাস্তবিক ভয় হবারই কথা। এই গিরগিটি দু পায়ে ভর দিয়ে খাড়া হয়ে বেশ রীতিমতো ছুটতে পারে। স্যাজসুদ্ধ এক-একটা প্রায় দু হাত পর্যন্ত লম্বা হয়। এই জন্তুর বাড়ি অস্ট্রেলিয়ায়।

 মালয়দেশে এবং ফিলিপাইন দ্বীপে আর-এক-রকম গিরগিটি আছে, তাকে ‘উড়ুক্কু গিরগিটি' বলা যেতে পারে। এদের পাঁজরের কয়েকখানা হাড় বুকের চামড়া ফুটো করে দু পাশে বেরিয়ে থাকে, সেগুলো পাতলা পর্দার মতো চামড়া দিয়ে ঢাকা। পর্দাটাকে পাখার মতো ছড়িয়ে এরা এক গাছ থেকে আর-এক গাছ পর্যন্ত স্বচ্ছন্দে উড়ে যায়। ছোটোখাটো পোকা বা ফড়িং গাছের কাছ দিয়ে গেলে এরা চট্ করে তাদের উপর উড়ে পড়ে। এ ওড়া অবশ্য পাখির মতো ওড়া নয়, কারণ এরা রীতিমতো বাতাস ঠেলে উড়তে পারে না-লাফিয়ে বাতাসে ভর করে খানিকটা ভেসে যায় মাত্র। এরা থাকে বড়ো-বড়ো গাছের আগায়, কচিৎ কখনো নীচে নামে। এক গাছ থেকে আর-এক গাছে যেতে হলে এরা শূন্য দিয়েই যাতায়াত করে। এপর্যন্ত প্রায় কুড়িরকমের উড়ুক্কু গিরগিটি পাওয়া গিয়াছে—তাদের সবগুলোরই রঙ অতি চমৎকার-কোনো ফুল বা প্রজাপতির রঙও তার চাইতে সুন্দর বা উজ্জ্বল হয় না। সমস্ত গায়ে যেন রামধনুর নকশা করা। এরাও কিন্তু বেশ রাগতে জানে, আর রাগলে পরে এদের গলাটি ফুলে তাতে নীল লাল নানারকম রঙের খেলা দেখা যায়।

 এ ছাড়াও আরো কতরকমের গিরগিটি আছে, তাদের কথা বলবার আর জায়গা নেই। দাড়িওয়ালা গিরগিটি, শিংওয়ালা গিরগিটি, সাপের মতো গিরগিটি, মাছের মতো গিরগিটি, কত যে তাদের রকমারি তার আর অন্ত নেই। একটা আছে, তার কোন দিকটা ল্যাজ আর কোন দিকটা মাথা হঠাৎ দেখলে বোঝাই যায় না। আর-একটার হাত-পাগুলো লম্বা লম্বা কাঠির মতো। ল্যাজটা গোড়ায় সরু মাঝখানে মোটা আবার আগায় ছুঁচাল—ঠিক যেন কাঁচা লঙ্কাটি। এদের অনেকে আবার রঙ বদলাতে জানে-কউ কেউ এ বিষয়ে বহুরূপীর চাইতেও ওস্তাদ। কেউ ডিম পাড়ে, কারও-বা একেবারে ছানা হয়। আবার কেউবা এমন ঠু্ন্‌কো যে, ধরামাত্র তার হাড়গোড় ভেঙে যায়।

সঙ্গেশ-অগ্রহায়ণ, ১৩২৪


সমুদ্রের ঘোড়া

 সমুদ্রের ঘোড়া বলতে হঠাৎ যেন সিন্ধুঘোটক মনে করে বোসো না। সিন্ধুঘোটক থাকে সমুদ্রের ধারে, কিন্তু তাকে ঘোটক বলা হয় কেন তা জানি না। তার চাল-চলন চেহারা বা

৩২৬
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২