পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পারে না। এই বাসা গড়া ও ভাঙার সময় ধনঞ্জয়ের লম্বা ঠোঁট আর শিং এ দুটোই বোধ হয় বেশ কাজে লাগে।

 ধনঞ্জয় পাখি আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার নানা জায়গায় বাস করে এবং তার নানারকম চেহারা দেখা যায়। উড়িষ্যা দেশে এ পাখির নাম “কুচিলাখাই”। ‘কুচিলাখাই'য়ের গায়ের রঙ কালো, তার উপর ঠোঁট আর শিঙের চকচকে লালচে হলুদ দেখতে বেশ মানায়। নেপালের লাল ধনঞ্জয়ের শিং নেই বললেই হয়, কিন্তু তার মুখে মাথায় খুব গম্ভীরগোছের কেশর আছে আর ঠোঁট দুটো করাতের মতো দাঁতালো। সুমাত্রা দ্বীপের ধনঞ্জয়ের শিং একেবারেই নেই, কিন্তু তার জমকাল কেশরটি অতি চমৎকার ধবধবে সাদা। আবার কেউ কেউ আছেন যাদের শিংও আছে, কেশরও আছে। শিঙের রকমারিও অনেক দেখা যায়—কারও শিং খড়েগর মতো বাকা, কারও কিরিচের মতো সোজা, আবার একজন আছেন তার শিংটি শশার মতো গোল্প, তার উপরে ঝুঁটি।

 ধনঞ্জয়ের চেহারাটি যেমন বিকট তার গলার আওয়াজটিও তেমনি কট্‌কটে। বনের মধ্যে হঠাৎ তার গলা শুনলে অন্য পাখিরা তো ভয় পায়ই, বাদর বা বনবেড়াল পর্যন্ত ভয়ে পালায় এমনও দেখা যায়! তা ছাড়া তার মাংস নাকি এমন বিস্বাদ যে কুকুরেও খেতে চায় না।

 ধনঞ্জয়ের কথা বলতে গেলে আর-এক পাখির কথা বলতে হয়—তার নাম টুকান (Toucan)। এই পাখির বাসা আমেরিকায়। এদের গায়ে অনেক সময়ে খুব জমকাল রঙের বাহার দেখা যায়—কিন্তু আসল দেখবার জিনিস এদের সাংঘাতিক লম্বা ঠোঁট দুখানি। দেখলে মনে হয় যত বড়ো পাখি প্রায় তত বড়ো ঠোট—যেন ‘বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বীচি”। তাতে চেহারাটি কেমন খোলে, তার আর বেশি বর্ণনা করবার দরকার নেই। দেখতে অনেকটা ধনঞ্জয়ের মতো হলেও আসলে এরা ধনঞ্জয় নয়—আর ধনঞ্জয়ের মতো অত বড়োও হয় না।

সন্দেশ—চৈত্র, ১৩২৪


শামুক ঝিনুক

 আমাদের শরীরের ভিতরকার শক্ত কাঠামোটিকে আমরা কংকাল বলি। কংকালটা ভিতরে থাকে আর এই রক্ত-মাংসের শরীর তাহাকে ঢাকিয়া রাখে—এইরূপই আমরা সচরাচর দেখি। কিন্তু এমন জীবও আছে যাহার কংকালটা থাকে শরীরের বাহিরে। এমন অদ্ভুত কাণ্ড কেহ দেখিয়াছ কি? বোধ হয় সকলেই দেখিয়াছ; কারণ, আমি কোনো অসাধারণ বিদঘুটে জন্তুর কথা বলিতেছি না—এই নিতান্ত সাধারণ শামুক ঝিনুক প্রভূতির কথাই বলিতেছি।

 শামুক ঝিনুকের মতো নিতান্ত সামান্য জিনিসের মধ্যে যে কত আশ্চর্য ব্যাপার লুকানো থাকে, ভাবিলে অবাক হইতে হয়। তোমরা গেঁড়ি দেখিয়াছ? বাগানে পুকুরের কাছে স্যাৎসেঁতে জায়গায় ছোটো-ছোটো জীবন্ত শামুকগুলি যারপরনাই অলসভাবে আস্তে-আস্তে চলাফিরা করে—তাহদের নাম গেঁড়ি। ঝিনুকের মধ্যে যে, জীবন্ত প্রাণীটি বাস করে, তাহার

জীবজন্তুর কথা
৩৩৩