পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যে কাজের কতকটা সুবিধা হয় তাহা বেশ বুঝিতে পারা যায়। একরকম চশমা আছে তাহাকে ‘বাইফোক্যাল’ বলে—সেই চশমার উপরের আধখানা একরকম কাচ, তাহাতে দরের জিনিস দেখিবার সুবিধা হয়, আর নীচের আধখানা আরেকরকম—তাহাতে পড়াশোনার কাজ চলে। এই মাছের চোখটা ঠিক যেন ‘বাইফোক্যাল’ চোখ।

 চোখের কথা বলিতে গেলে আরেকটি মাছের কথাও বলিতে হয়। সে মাছের একদিকে দুইটা চোখ, আর একদিকে চোখ নাই। এরকম একদিক কানা হইবার অর্থ কি জান? মাছটার স্বভাব এই যে, সে কাদার মধ্যে কাৎ হইয়া শুইয়া থাকে। যেদিকটা কাদার মধ্যে অন্ধকারে পড়িয়া থাকে, সেদিকটায় চোখ থাকা না থাকা সমান কথা —তাই তাহার দুইটা চোখই থাকে মুখের একপাশে যে পাশটা আকাশের দিকে ফিরান সেই পাশে।

 আফ্রিকার নীল নদীতে একরকম মাছ আছে সে চিৎ হইয়া চলে। চলার এরকম অদ্ভুত ভঙ্গী হইবার একমাত্র কারণ যাহা দেখা যায় তাহা এই যে, ইহাদের পেটের চাইতে পিঠের রংটা অনেক বেশি সাদা। সাদা পিঠটা আলোর দিকে থাকিলে চকচক, করে—তাহাতে মাছটার গা-ঢাকা দিয়া থাকিবার সুবিধা হয় না। তাই সে কালো পেটটাকে উপর দিকে ধরিয়া আপনাকে জলের মধ্যে বেশ বেমালুম করিয়া রাখে।

 জানোয়ারের মধ্যে মানুষ ক্যাঙারু প্রভৃতি জন্তু যেমন খাড়া হইয়া চলে, মাছেদের মধ্যেও এমন এক একজন আছেন যাঁহারা মানুষের মতো খাড়া হইয়া চলেন। বিশেষত একজন আছেন, তিনি সমুদ্রে থাকেন, তিনি কেবল খাড়া থাকিয়াই সন্তুষ্ট হন না— তাঁহার মাথাটি আবার নীচের দিকে রাখা চাই। এই মাছের চেহারাটিও অদ্ভুত ছচালরকমের, তাই ইংরাজিতে ইহার নাম Needle fish বা ছচ মাছ। সমুদ্রে একরকম চাঁদা মাছ আছে, তাহারা রাগিলে বা ভয় পাইলে পেটটাকে ফুটবলের মতো ফুলাইয়া হঠাৎ চিৎ হইয়া জলের উপর ভাসিয়া উঠে। তখন ফোলা পেটটি জলের উপর বাহির হইয়া ভারি অদ্ভুত দেখায়। কোন কোন চাঁদা মাছের গায়ে আঁশের বদলে কাঁটা বসান থাকে রাগের সময় সেগুলি শজারুর কাঁটার মতো খাড়া হইয়া উঠে।

 চেহারার কথা যদি বল, মাছের চেহারা যে কত অদ্ভুতরকমের হইতে পারে তাহার কিছু কিছু নমুনা দেওয়া হইতেছে। থলে-গলা চাবুক-লেজ’ মাছের গলায় লম্বা থলি আর ল্যাজটি চাবকের মতো; বড়শিবাজ মাছের নাকের উপর ছড়ি, তাহার আগায় টোপের মতো নোলক, আর যার যত বড় গা তত বড় হাঁ; শয়তান মাছের চেহারাটা মুখখাশপরা সঙের মতো। আমেরিকার রাক্ষসে মাছের সাংঘাতিক দাঁতের কামড়ে গোরু ঘোড়া পর্যন্ত প্রাণ হারায়—তাহারও চেহারাটি নেহাৎ ভদ্রমতন নয়।

 কিন্তু বাস্তবিক উদ্ভট বিদঘুটে মাছের খোঁজ করিতে হইলে সমুদ্রের গভীর জলে যেসব মাছ থাকে, তাহাদের সংবাদ লইতে হয়। সেদিন এইরপ কতকগুলি মাছের চমৎকার বর্ণনা পড়িয়াছি! তাহার দু-একটি নমুনা শোন। একটি মাছ, তাহার কপালের উপর দুইটা শিং-সেই শিঙের আগায় তাহার চোখ। শিং দুটোকে সে ইচ্ছামত এদিক ওদিক ফিরাইতে পারে। তাহার গায়ে আবার সারি সারি আলো বসান—গভীর অন্ধকার সমুদ্রে সেগুলি আপনা হইতেই জলিতে থাকে। আর একটা মাছ, তাহার মুখে লম্বা দাড়ি-দেখিতে অনেকটা গাছের পাতার মতো; তাহার উপর মুখভরা বড় বড় গজালের মতো দাঁত। অন্ধকারে সমস্তটা দাড়ি জলিতে থাকে। আরেকটি মাছ তাহার চোখ দুইটা ঠোঁটের কোণায়, মনে হয় হাঁ করিলেই চোখ দুইটা গিলিয়া যাইবে। ইহার নাকটা জুতার গোড়ালির মতো উচু আর হাঁ করিলেই মুখের ভিতরে আলো জ্বলিয়া উঠে

১৪৮