পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—শিকার ধরিবার ভারি সুবিধা। আর একটি মাছ আছে, তাহার সমস্ত শরীরটি লালকালো চিত্রবিচিত্র করা। তাহার চোখ দুইটা এত বড় যে হঠাৎ দেখিলে মনে হয় যে সমস্ত মাথাভরাই চোখ।

 ইহারা সকলেই প্রায় শিকারী মাছ। নিজেদের বাতি দিয়া ইহারা শিকার খোঁজে। কেহ কেহ সমুদ্রের নীচে বাতি জালাইয়া চুপচাপ বসিয়া থাকে; সেই বাতি দেখিয়া যেসব শিকার তামাসা দেখিতে আসে, তাহাদের খপ করিয়া গিলিয়া খায়। কোন কোন মাছ আছে, তাহারা শিকারকে বাগাইবার জন্য নানারকম অস্ত্রকৌশল খাটাইয়া থাকে। কাহারও বিষাক্ত ল্যাজ চাবুকের মতো শিকারের ঘাড়ে আসিয়া পড়ে, কেহ বিদ্যুৎ চালাইয়া শিকারকে আড়ষ্ট করিয়া ফেলে, কেহ জোঁকের মতো তাহার রক্ত চুষিয়া ধরে আর কেহ পিচকারি মারিয়া ডাঙার শিকারকে জলে পাড়িয়া আনে। টিকটিকির শিকার ধরা দেখিয়াছ? কোন কোন মাছ আছে তাহারাও ঠিক সেইরকম কায়দায় শিকার ধরে। আস্তে আস্তে চুপি চুপি শিকারের পিছনে গিয়া তারপর হঠাৎ, টিকটিকির জিভের মতো, তাহাদের মুখটা সরু, লম্বা হইয়া শিকারের ঘাড়ে ছুটিয়া পড়ে।

 এইবারে একটা মাছের কথা বলিব আমরা তাহার নাম দিয়াছি গেছো মাছ। কোন কোন মাছ আছে, তাহারা জলের বাহিরে আসিয়াও অনেকক্ষণ পর্যন্ত বাঁচিতে পারে। কই মাছ যে অনেকদূর পর্যন্ত মাটির উপর ‘কাতরাইয়া' চলিতে পারে, তাহা বোধহয় সকলেই দেখিয়াছ। কিন্তু মাছ যে আবার সখ করিয়া জল ছাড়িয়া ডাঙায় ওঠে আর রীতিমত গাছে চড়িতে পারে, ইহা চোখে না দেখিলে বিশ্বাস করা কঠিন। এই মাছ আফ্রিকাতেই বেশি পাওয়া যায়। ইহার দুপাশের ডানা দুইটি দেখিতে কতকটা আঙল-জোড়া পায়ের মতো। সেই ডানার উপর ভর করিয়া মাছগুলি অনায়াসে ডাঙায় উঠিয়া গাছে চড়িয়া বসে। ইহাদের মুখে প্রায়ই ব্যাঙের মতো কদাকার হয়—চোখ দুটিও সেইরকম ড্যাব ডেবে। এ মাছ খাইতে এমন বিস্বাদ যে মানুষ ত দুরের কথা—ডাঙার কোন জন্তু বা আকাশের পাখিরা পর্যন্ত ইহাকে ছোঁয় না। কিন্তু জলের বড় বড় মাছগুলি ইহাদের দেখিলে টপাটপ খাইয়া ফেলে। সেইজন্য ইহারা জল ছাড়িয়া ডাঙায় উঠিবার জন্য এক-এক সময়ে এমন ব্যস্ত হইয়া উঠে।

 মাছের বিদ্যার কথা অনেক বলা হইল—এইবার আরেকটি বিদ্যার কথা বলিয়াই শেষ করি। সেটি আর কিছু নয়—সংগীতবিদ্যা! অবশ্য সংগীত বলিতে মনে করিও যে তাহারা রীতিমত সা-রে-গা-মা সুর করিয়া রাগ-রাগিণীর চর্চা করে। কোন কোন মাছ আছে তাহারা একটু আধটু শব্দ করিতে জানে। কেহ ইঁদুরের মতো কুটকুট শব্দ করে, কেহ অদ্ভুতরকম ঘৎ ঘৎ শব্দ করে, আর কেহ বা ডুর ডুর করিয়া ঢাকের মতো আওয়াজ করে। কিন্তু সকলের চাইতে ওস্তাদ যে মাছ, সে দলেবলে সমুদ্রের তীরে পড়িয়া মোটা কান্নার মতো একরকম অদ্ভুত সুর করিতে থাকে। খানিক দুর হইতে শুনিলে হঠাৎ মনে হয় যেন মানুষের কোলাহলের সুর।

১৪৯