পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এখনো তেজে পরিপূর্ণ। তাহাদের দেখিয়া ইংরাজ যোদ্ধাগণের মনে শ্রদ্ধার উদয় হইল। সকলেই বলিতে লাগিল, “ইহাদের উপর শাস্তি দিয়া প্রতিশোধ লওয়া কখনই উচিত নয়।” যিনি দূত হইয়া গিয়াছিলেন তিনি বলিলেন, “ইহাদের শাস্তি দিলে রাজা এড়ওয়ার্ডের কলঙ্ক হইবে—ইংরাজ জাতির কলঙ্ক হইবে।” কিন্তু এওয়ার্ডের মন গলিল না—তিনি জল্লাদ ডাকিতে হুকুম দিলেন। তখন ইংলণ্ডের রানী ফিলিপা বন্দীদের মধ্যে কাঁদিয়া পড়িলেন এবং দুই হাত তুলিয়া ভগবান যীশুর দোহাই দিয়া এড়ওয়ার্ডকে বলিলেন, “ইহাদের তুমি ছাড়িয়া দাও।” তখন এওয়ার্ড অর ‘না’ বলিতে পারিলেন না।

 ছয় বীরকে মুক্তি দিয়া রানী তাহাদিগকে তাঁহার নিজের বাড়িতে লইয়া, পরিতোষপূর্বক ভোজন করাইলেন এবং নানা উপহার দিয়া বিদায় দিলেন। ইহাদের বীরত্বের কথা ফরাসিরা আজও ভোলেন নাই—ইংরাজও তাহা স্মরণ করিয়া রাখিয়াছেন।

সন্দেশ-অগ্রহায়ণ, ১৩২৬


একটি বর

 একটি অন্ধ ভিখারী রোজ মন্দিরে পূজা করতে যায়। প্রতিদিন ভক্তিভরে পূজা শেষ করে মন্দিরের দরজায় প্রণাম করে ফিরে আসে। মন্দিরের পুরোহিত সেটা ভালো করে লক্ষ্য করে দেখেন।

 এইভাবে কত বৎসর কেটে গেছে কেউ জানে না। একদিন পুরোহিত ভিখারীকে ডেকে বললেন, “দেখ হে। দেবতা তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। তুমি কোনো একটা বর চাও। কিন্তু, মনে রেখ—একটিমাত্র বর পাবে।”

 ভিখারী বেচারা বড়ো মুস্কিলে পড়ল! কি যে চাইবে, কিছু আর ঠিক করতে পারে না। একবার ভাবল, দৃষ্টি ফিরে চাইবে; আবার ভাবল, টাকাকড়ি চাইবে। আবার ভাবল, আত্মীয়স্বজন ছেলেপিলে দীর্ঘ জীবন এই-সব চাইবে, কিছুতেই আর ঠিক করতে পারে না। তখন সে বলল, “আচ্ছা, আমি কাল ভালো করে ভেবে এসে বর চাইব। এখন কিছুতেই ঠিক করতে পারছি না, কি চাই।”

 অনেক ভেবেচিন্তে সে মনে মনে একটা ঠিক করে নিল। তার পর মন্দিরে গিয়ে পুরোহিতকে বলল,“পুরুত ঠাকুর। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ দিচ্ছি—আপনি আমার বড়ো উপকার করলেন। যে একটি বরের কথা বলেছেন সেটি এখন আমি চাইব-মনে রাখবেন, একটিমাত্র বর আমি চাচ্ছি। আমি এই বর চাই যে মরবার আগে যেন আমার নাতিকে ছয়তলা বাড়ির মধ্যে বসে সোনার থালায় পায়স খেতে স্বচক্ষে দেখে যেতে পারি।”

 এই এক বরে ভিখারী চোখের দৃষ্টি ফিরে পেল, ধনজন পেল, ছেলেপিলে, নাতি-নাতনি পেল, দীর্ঘজীবন পেল।

সন্দেশ-শ্রাবণ, ১৩২৮
আন্যান্য গল্প
৩৭৫