পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সত্যবাহন । ধরা না হয় দূরের কথা, ও-বিষয়ে ভালোভালো বই ষে দু-একখানা আছে, সেগুলো পড়া উচিত । আমি বেশি কিছু বলছি না—অন্তত আমার সাম-নির্ঘণ্ট আর সিদ্ধান্তবিশুদ্ধিকা, এ দুখানা পড়তে পারে তো ভবদুলাল। তা হলে তো পড়ে দেখতে হচ্ছে । বললেন বইটার ? সত্যবাহন । সাম্য-নির্ঘণ্ট, তিন টাকা দু আনা, আর সিদ্ধান্ত-বিশুদ্ধিকা—তিন ভলুম, খণ্ড-সিদ্ধান্ত অখণ্ড-সিদ্ধান্ত আর খণ্ড খণ্ড-সিদ্ধান্ত—সাত টাকা চার আনা । দুখানা বই একসঙ্গে নিলে সাড়ে নয় টাকা, প্যাকিং চার পয়সা, ডাকমাশুল সাড়ে পাঁচ আনা, এই সবসুদ্ধ ন টাকা চৌদ্দ আনা । ভবদুলাল। তা এটা আপনার কোন এডিশান বললেন ? ঈশান । আঃ—ফাস্ট এডিশান মশাই, ফাস্ট এড়িশান— এই তা সবে সাত বছর হল, এর মধ্যেই কি ? সত্যবাহন । তা আমি তো আর অন্যদের মতো বিজ্ঞাপনের চটক দিয়ে নিজের ঢাক নিজে পেটাই না । ঈশান । হ্যা, উনি তো আর নিজে পেটান না-ওর পেটাবার লোক আছে । তা ছাড়া এই-সব কাগজওয়ালাগুলো এমন হতভাগা, কেউ ওর বইয়ের সুখ্যাত করতে চায় না। সত্যবাহন । কেন, সচ্চিন্তা-সন্দীপিকায় বেশ লিখেছিল। ঈশান। ও হ্যা, আপনার মেজোমামা লিখেছিলেন বুঝি ? সত্যবাহন। মেজোমামা নয়, সেজোমামা । কি হে, তোমার এখানে হাঁ করে সব কথা শুনবার দরকার কি বাপু ? [ রামপদর প্রস্থান ভবদুলাল । আচ্ছা, ঐ-যে খণ্ড খণ্ড কি-সব বলছিলেন, ওগুলোর আসল ব্যাপারটা কি একটু বুঝিয়ে বলতে পারেন ? নিকুঞ্জ । হা, হ্যাঁ, ওটা এই বেলা বুঝে নিন। এ-বিষয়ে উনিই হচ্ছেন অথরিটি । সত্যবাহন । ব্যাপারটা কি জানেন, খণ্ড-সিদ্ধান্ত হচ্ছে যাকে বলে পৃথগৃ দর্শন। যেমন কুকুরটা ঘোড়া নয়, ঘোড়াটা গোরু নয়, গোরুটা মানুষ নয়-এইরকম। এ নয়, ও নয়, তা নয়, সব আলগা, সব খণ্ড-খণ্ড–এই সাধারণ ইতর লোকে যেমন মনে করে । ভবদুলাল। (স্বগত) দেখলে । বলছে সাধারণ ইতর লোক ! সত্যবাহন । আর অখণ্ড-সিদ্ধান্ত হচ্ছে, যাকে আমরা বলি কেন্দ্রগতং নিবিশেষং অর্থাৎ এই যে নানারকম সব দেখছি এ কেবল দেখবার রকমারি কিনা । আসলে বস্তু হিসাবে ঘোড়াও যা গোরুও তা—কারণ বস্তু তো আর স্বতন্ত্র নয় —মূলে কেন্দ্রগতভাবে সমস্তই এক অখণ্ড—বুঝলেন না ? ভবদুলাল। হ্যা, বুঝেছি। মানে কেন্দ্রগতং নিবিশেষং— এই তো ? সত্যবাহন। হ্যা, বস্তুমাত্রেই হচ্ছে তার কেন্দ্র্যাত কতকগুলি माछ्रेक কি নাম আমার দিকে তাকিয়ে গুণের সমষ্টি । মনে করুন ঘোড়া আর গোরু—এদের গুণগুf সব মিলিয়ে-মিলিয়ে দেখুন। ঘোড়া চতুষ্পদ, গোরু চতুঙ্গদ, ঘোড়া পোষ মানে, গোরু পোষ মানে-সুতরাং এখান দিয়ে অখণ্ড হিসাবে কোনো তফাত নেই, এখানে ঘোড়াও যা গোরুও তা। আবার দেখুন, ঘোড়াও ঘাস খায় গোরুও ঘাস খায়—এও বেশ মিলে যাচ্ছে, কেমন ? ভবদুলাল। কিন্তু ঘোড়ার তো শিঙ নাই, গোরুর শিঙ আছে —তা হলে সেখান দিয়ে মিলবে কি করে ? সত্যবাহন। সেখানে গাধার সঙ্গে মিলবে। এমনি করে সব পদার্থের সব গুণ নিয়ে যদি কাটাকাটি করা যায় তবে দেখবেন খণ্ড ফ্র্যাকশন সব কেটে গিয়ে বাকি থাকবে—এক । তাকেই বলি আমরা অখণ্ডতত্ত্ব । ভবদুলাল। এইবারে বুঝেছি। এই যেমন তাসে তাসে জোড় মিলিয়ে সব গেল কেটে বাকি রইল—গোলামচোর । সত্যবাহন । কিন্তু সাধন করলে দেখা যায়, এর উপরেও একটা অবস্থা আছে । সেটা হচ্ছে সমসাম্যম্ভাব, অর্থাৎ খণ্ড খণ্ড মীমাংসা । এ অবস্থায় উঠতে পারলে তখন ঠিকমতো সমীক্ষা সাধন আরম্ভ হয় । ভবদুলাল । সমীক্ষা' আবার কি ? সত্যবাহন । সাধনের স্তরে উঠে যেটা পাওয়া, তাকে বলে সমীক্ষা—সেটা কিরকম জানেন ? ভবদুলাল । থাক, আজ আর নয়। আমার আবার কেমন মাথান ব্যারাম আছে । সত্যবাহন । না, আমি ওর ভেতরকার জটিল তত্ত্বগুলো কিছু বলছি না, খালি গোড়ার কথাটা একটুখানি ধরিয়ে দিচ্ছি। অর্থাৎ এটুকু তলিয়ে দেখবেন যে ঘোড়াটা যে অর্থে ঘাস খাচ্ছে গোরুটা ঠিক সে অর্থে ঘাস খাচ্ছে কিনা— ভবদুলাল । তা কি করে খাবে ? এ হল ঘোড়া, ও হল গোরু—তবে দুজনের যদি একই মালিক হয়, তবে এ-ও মালিকের অর্থে খাচ্ছে, ও-ও মালিকের অর্থে খাচ্ছে— সত্যবাহন । না, না-আপনি আমার কথাটা ঠিক ধরতে পারেন নি । ভবদুলাল। ও—তা হবে । আমার আবার মাথার ব্যারাম আছে কিনা। আচ্ছা আজকে তা হলে উঠি । অনেক ভালোভালো কথা শোনা গেল—বই লেখবার সময় কাজে লাগবে । ঈশান । ওকে একখানা নোটিশ দিয়েছেন তো ? জনাৰ্দন । ও, না । এই একখানা নোটিশ নিয়ে যান ভবদুলালবাবু । আজ অমাবস্যা, সন্ধ্যার সময় আমাদের সমীক্ষা-চক্র বসবে। সোমপ্রকাশ। আজ ঈশানবাবু চক্রাচার্য—ওঃ । ওর ইয়ে শুনলে আপনার গায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠবে। ঈশান । এই তত্ত্ব-টন্তু যে-সব শুনলেন ওগুলো হচ্ছে tష్టి?