পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভবদুলাল । তাই নাকি, তবে আপনি যে এতক্ষণ গজ করছিলেন । ঈশান। গল্প কি মশাই ? সমীক্ষা কি গল্প হল ? জনাদান । কাকে কি বলে তাই জানেন না, কেন তর্ক করেন মিছিমিছি ? ভবদুলাল। না, না, তর্ক করব কেন ? দেখুন তর্ক করে কিছু হবার জো নেই। এই যে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, এ যে তর্ক করে সব চালাচ্ছে, সে কি ভালো করছে ? আমি তর্কের জন্য বলি নি । সত্যবাহন। দেখুন, এ আপনাদের ডারি অন্যায়। ভুলচুক কি আর আপনাদের হয় না ? অমন করলে মানুষের শিখবার আগ্রহ থাকবে কেন ? আশ্রমের ছাত্র বিনয়সাধনের প্রবেশ ঈশান। ঐ দেখ, আবার একটি এসে হাজির। তুমি কে হে ? বিনয়সাধন । আমি ? হ্যা, আমার কথা কেন বলেন ? আমি আবার একটা মানুষ ! হাঃ, কি যে বলেন । ঈশান। বলি, এখানে এয়েছ কি করতে ? সত্যবাহন । কি নাম তোমার ? বিনয়সাধন। আজে, আমার নাম শ্রীবিনয়সাধন । (পকেট হইতে পত্র বাহির করিয়া) ভবদুলালবাবু কার নাম ? সত্যবাহন । কেন হে, বেয়াদব ? সে খবরে দরকার কি ? নিকুঞ্জ । এ কি এয়াকি পেয়েছ ? তোমার বাপ-ঠাকুর্দার বয়সী ভদ্রলোক সব—ছি, ছি, ছি ! জনাৰ্দন । কি আস্পর্ধা দেখুন তো । নিকুঞ্জ । হা—কার বাপের নাম কি, শ্বশুরের বয়েস কত, ওর কাছে তার কৈফিয়ত দিতে হবে । সত্যবাহন। এরই নাম ভবদুলালবাবু । এখন কি বলতে চাও এর বিরুদ্ধে বল । বিনয়সাধন । না, না, বিরুদ্ধে বলব কেন ? সত্যবাহন। কাপুরুষ। এইটুকু সৎসাহস নেই—আবার আচফালন করতে এসেছ ? বিনয়সাধন। আহা, আমার কথাটাই আগে বলতে দিন— সত্যবাহন। শুনলেন ডবদুলালবাবু ? ওর কথাটা আগে বলতে দিতে হবে । আমাদের কথাগুলোর কোনো মূল্যই নেই । নিকুঞ্জ। দশজনে যা শুনবার জন্যে কত আগ্রহ করে আসে, এরা সে-সব তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবেন। সোমপ্রকাশ । এইজন্য সাধকেরা বলেন যে মানুষের ভূয়োদর্শনের অভাব হলে মানুষ সব করতে পারে। D বিনয়সাধন । কি আপদ! মশায় চিঠিখানা দিতে এসেছিলুম তাই দিয়ে যাচ্ছি—এই নিন। আচ্ছা ঝকমারি ষা হোক ! তোমার বিনয়ধনের দ্রুত্ব গ্রন্ধন नोक সোমপ্রকাশ। মানুষের মনের গতি কি আশ্চর্য । একদিকে হেরিডিটি আর একদিকে এনভাইয়ারনমেন্ট—এই দুয়ের প্রভাব এক সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে । ভবদুলাল । ( পত্র পাঠ করিয়া ) শ্ৰীখণ্ডবাবু আমাকে কাল ওখানে নিমন্ত্রণ করেছেন । ঈশান । কি ! এত বড়ো আস্পর্ধা ! আবাব নিমন্ত্রণ করতে সাহস পান কোন মুখে ? সত্যবাহন । না, যাব না আমরা । ও-সব লোকের সম্পর্ক রাখে না । ডবদুলাল । উনি লিখছেন, ‘কাল ছুটির দিন, আপনার সঙ্গে নিরিবিলি বসিয়া কিছু সহপ্রসঙ্গ করিবার ইচ্ছা আছে।’ ঈশান। ঐ দেখছেন ? নিরিবিলি বসিয়া । কেন বাপু, আমরা এক-আধজন ভদ্রলোক থাকলে তোমার আপত্তিটা কি ? জনাৰ্দন । এর থেকেই বোঝা উচিত যে ওর মতলবট ভালো নয় । নিকুঞ্জ । ঠিক বলেছেন । মতলব যদি ভালোই হবে, তবে এত ঢাক-ঢাক গুড়-গুড় কেন ? নিরিবিলি বসতে চান কেন ? সোমপ্রকাশ। বুঝলেন ডবদুলালবাব, আপনি ওখানে যাবেন না । গেলেই বিপদে পড়বেন । ভবদুলাল। বল কি হে ? ছুরিদ্বোরা মারবে নাকি ? সোমপ্রকাশ । না, না, বিপদটা কি জানেন ? চিন্তাশীল লোকেরা বলেন যে, বিপদ মারাত্মক হয় সেখানে, যেখানে তার অন্তগূঢ় ভাবটিকে তার বাইরের কোনো অবান্তর স্বরাপের দ্বারা আচ্ছন্ন করে রাখা হয় । ভবদুলাল । ( পুলকিত ভাবে ) এ আবার কি বলে শুনুন । সোমপ্রকাশ স্বয়ং হাবটি স্পেনসার এ কথা বলেছেন । আপনি হাবটি স্পেনসারকে জানেন তো ? ভবদুলাল। হা...হার্বট, স্পেনসাব, হাচি, টিকটিকি, ভূত, প্রেত সব মানি । স্যালাহন সমাদার সত্যবাহন । আপনি ভাববেন না ভবদুলালবাব, আপনার কোনো ভয় নেই । আমি আপনার সঙ্গে যাব, দেখি ওরা কি করতে পারে । নিকুঞ্জ । ব্যাস, নিশ্চিন্ত হওয়া গেল । ঈশান । সেই জুবিলির বছর কি হয়েছিল মনে নেই ? শ্ৰীখণ্ডবাবু ওদের ওখানে এক বক্তৃতা দিলেন, আমরা দল বেঁধে শুনতে গেলাম। গিয়ে শুনি, তার আগাগোড়াই কেবল নিজেদের কথা । ওদের আশ্রম, ওদের সাধন, ওদের যত ছাইডসম, তাই খুব ফলাও করে বলতে লাগলেন। সত্যবাহন। শেষটায় আমি বাধ্য হয়ে উঠে তেজের সঙ্গে বললাম, লালাজি দেওনাথের সময় থেকে আজ পর্যন্ত যে অখণ্ডসাধন-ধারা প্রবাহিত হয়ে আসছে, তা যদি কোথাও অক্ষুণ্ণ থাকে, তবে সে হচ্ছে আমাদের সাম্য-সিদ্ধান্ত সভা।" ঈশান। ওরা সে-সব ভোঙচুর এখন বিড়ানের আগডুম ואש