পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাগডুম করছেন। আর বিজ্ঞান-বিজ্ঞান বললেই কি লোকের চোখে ধুলো দেওয়া যায়। নিকুঞ্জ। বেশি দূরে যাবার দরকার কি ? ওরা কি-রকম সব ছেলে তৈরি করছেন তাও দেখুন, আর আমাদের সোমপ্রকাশকেও দেখুন। জনাৰ্দন। একটা আদর্শ ছেলে বললেই হয়। সোমপ্রকাশ । না, না, ছি-ছি-ছি, কি বলছেন । আমি এই যেমন লোহিত সাগর আর ভূমধ্য সাগরের মধ্যে সুয়েজ প্রণালী, আমায় সেইরকম মনে করবেন। জনাদন। আসল কথা হচ্ছে, আমরা এখন সাধনের যে স্তরে উঠেছি, ওরা সে পর্যন্ত ধারণা করতেই পারেন নি। নিকুঞ্জ। ও । গতবারে যদি আপনি থাকতেন ! ঈক্ষা ও সমীক্ষা সম্বন্ধে সমাদারমশাই যা বললেন শুনলে আপনার গায়ে কাটা দিয়ে উঠত । ঈশান । হ্যা, হ্যা, কাটা দিয়ে তো উঠত, কিন্তু এখন দুপুর রাত পর্যন্ত আপনাদের ঐ আলোচনাই চলবে নাকি । সকলের গাত্রোথনি সত্যবাহন। তা হলে এই কথা রইল, কাল আপনার বাড়ি হয়ে আমি আপনাকে নিয়ে যাব। [ সকলের প্রস্থান তৃতীয় দৃশ্য শ্ৰীখণ্ডদেবের আশ্রম । ছাত্রেরা সেমিসার্কল হইয়া দণ্ডায়মান । শিক্ষক নবীনবাবু প্রভৃতি ব্যস্তভাবে ঘোরাঘুরি করিতেছেন। শ্ৰীখণ্ডদেব ঘরের মাঝখানে একটা টেবিলের উপর বড়ো-বড়ো বই সাজাইয়া নাড়াচাড়া করিতেছেন। একপাশে কতকগুলি অদ্ভুত যন্ত ও অর্থহীন চার্ট প্রভৃতি। দেয়ালে কতকগুলি কার্ডে নানারকা মটো লেখা রহিয়াছে । নবীন । ( জানলা দিয়া বাহিরে তাকাইয়া ) এই মাটি করেছে। সঙ্গে-সঙ্গে সত্যবাহন সমাদারও আসছে দেখছি । শ্ৰীখণ্ড। আসুক, আসুক। একবার চোখ মেলে সব দেখে যাক । তারপর দেখি, ওর কথা বলবার মুখ থাকে কিনা। নবীন ! এসে একটা গোলমাল না বাধালেই হয়। শ্ৰীখণ্ড । তা যদি করে তাহলে দেখিয়ে দেব যে শ্ৰীখণ্ড লোকটিও বড় কম গোলমেলে নয়। সত্যবাহন ও ডবদুলালের প্রবেশ সত্যবাহন । এই যে, ছেলেগুলো সব হাজির রয়েছে দেখছি। Wիտի শ্ৰীখণ্ড । না, সব আর কোথায়? ছুটিতে অনেকেই বাড়ি গিয়েছে। সত্যবাহন। খালি খুব খারাপ ছেলেগুলো রয়ে গেছে বুঝি ? শ্ৰীখণ্ড। খারাপ ছেলে আবার কি মশায় ? মানুষ আবার খারাপ কি ? খারাপ কেউ নয়। ঘোর অসাম্য বদ্ধ পাষণ্ড যে তাকেও আমরা খারাপ বলি না । ভবদুলাল। তা তে বটেই ও-সব বলতে নেই। আমি একবার আমাদের গোবরা মাতালকে খারাপ লোক বলেছিলাম, সে এত বড়ো একটা থান ইট নিয়ে আমায় মারতে এসেছিল । ওরকম কক্ষনো বলবেন না । সত্যবাহন। সে কি মশায় । যে খারাপ তাকে খারাপ বলব আলরং বলব । খারাপ ছেলে । শ্ৰীখণ্ড। আহা-হা, উনি আশ্রমের শিক্ষক - নবীনবাবু। সত্যবাহন । ও, তাই নাকি ? যাই হোক, তুমি কি পড়ছ ছোকরা ? ছাত্র । শব্দার্থ-খণ্ডিকা, আয়স্কন্ধ-পদ্ধতি, লোকাস্টপ্রকরণ, সিন্নেকস্ ক মোপেডিয়া, পালস এক্সট্রা সাইক্লিক ইকুইলিখ্রিয়ম এ্যাণ্ড দি নেগেটিভ জিরো— সত্যবাহন। থাক, থাক, আর বলতে হবে না। দেখুন, অত বেশি পড়িয়ে কিছু লাভ হয় না। আমি দেখেছি ভালো বই খান-দুই হলেই এদিককার শিক্ষা সব একরকম হয়ে যায় । ভবদুলাল। আমার চলচিত্তচঞ্চরি’ বইখানা আপনাদের লাইব্রেরিতে রাখেন না কেন ? শ্ৰীখণ্ড । বেশ তো, দিন-না এক কপি । ভবদুলাল । আচ্ছা, দেব এখন। ওটা হয়েছে কি, বইটা এখনো বেরোয় নি। মানে খুব বড়ো বই হচ্ছে কিনা, অনেক সময় লাগবে । কোথায় ছাপতে দিই বলুন তো ? শ্ৰীখণ্ড । ও, এখনো ছাপতে দেন নি বুঝি ? ভবদুলাল । না, এই লেখা হলেই ছাপতে দেব। আগে একটা ভূমিকা লিখতে হবে তো ? সেটি কিরকম লিখব তাই ভাবছি। খুব বড়ো বই হবে কিনা ৷ ঐীখণ্ড । কি নাম বললেন বইখানার ? ভবদুলাল ! কি নাম বললাম ? চলচঞ্চল, কি না ? দেখুন তো মশাই, সব ঘুলিয়ে দিলেন—এমন সুন্দর নামটা ভেবেছিলাম । সত্যবাহন । হ্যা, যা বলছিলাম। সৌভাগ্যক্রমে আজকাল বাজারে দুখানা বই বেরিয়েছে—সাম্য-নির্ঘণ্ট আর সিদ্ধান্তবিশুদ্ধিকা—তাতে শিক্ষাতত্ত্ব আর সাধনতত্ত্ব এই দুটো দিকই সুন্দরভাবে আলোচনা করা হয়েছে। শ্ৰীখণ্ড। ঐ তো-ও বিষয়ে আপনাদের সঙ্গে আমাদের মিলবে না । আমরা বলি অখণ্ড শিক্ষার আদর্শ এমন হওয়া উচিত যে তার মধ্যে বেশ একটা সর্বাঙ্গীণ সামঞ্জস্য থাকবে যেমন নিঃশ্বাস আর প্রশ্বাস । না ? সুকুমার সমগ্র রচনাবলী। ৯ :