পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঈশান। . ও কিরকম বিশ্রী সুরে গান গাইছেন বলুন তো ? ভবদুলাল । ওটা আমার একটা নতুন গান। ঈশান । আপনার কিরকম ? আমি আজ পাঁচ-বছর ওটা গেয়ে আসছি। আর ওটার ওরকম সুর মোটেই নয় । ওটা এইরকম—(গান) । ভবদুলাল । তাই নাকি ? ওটা আপনার গান ? ঐ যা, ওটাও আমার চলচ্চিত্তচঞ্চরিতে দিয়ে ফেলেছি। তা আপনার নামেই দিয়ে দেব । নিকুঞ্জ । কি মশায়, আপনার আশ্রমিক পর্ব শেষ হল ? ভবদুলাল। কি বললেন ? কি পর্বত ? নিকুঞ্জ । বলি আশ্রমের সথটা মিটল ? ভবদুলাল । হ্যা, দুদিন বেশ জমেছিল, তারপর ওরা কিরকম করতে লাগলেন তাই চলে এলাম। আসবার সময় একটা ছেলের কান মলে দিয়ে এসেছি । সোমপ্রকাশ। দূরবীক্ষণ যন্ত্রে যেমা দুরের জিনিসকে কাছে এনে দেথায় তেমনি কিছুক্ষণ তাগে আমার একটা অনুভূতি এসেছিল যে আপনি হয়তো আবার আমাদের মধ্যে ফিরে আসবেন । তবদুলাল । ওদের আশ্রমে একটা দুরবীণ আছে – তার এমন তেজ যে চাদের দিকে তাকালে চাঁদের গায়ে সব ফোসকাফোসকা মতন পড়ে যায়। বোধ হয় থাউজ্যাণ্ড হরস্-পাওয়ার কি তার চাইতেও বেশি হবে । ঈশান। এত বুজরুকিও জানে ওরা । জনাৰ্দন। ওকে ভালোমানুষ পেয়ে সাপ বোঝাতে ব্যাঙ বুঝিয়ে দিয়েছে। ভবদুলাল । হ্যা, ব্যাঙ বলতে মনে হল—সোমপ্রকাশের কথা ওরা কি বলেছেন শোনেন নি বুঝি ? সোমপ্রকাশ । না, না, কিছু বলেছেন নাকি ? ভবদুলাল । আমি ওদের কাছে সোমপ্রকাশের সুখ্যাতি •করছিলাম, তাই শুনে শ্ৰীখণ্ডবাবু বললেন যে আমরা চাই মানুষ তৈরি করতে—কতকগুলো কোলা ব্যাও তৈরি করে কি হবে ? নিকুঞ্জ । আপনি এর কোনো প্রতিবাদ করলেন না ? ভবদুলাল । না—তখন খেয়াল হয় নি । সোমপ্রকাশ। মানুষকে চেনা শক্ত। হাবটি ল্যাথামৃ তার একটি প্রবন্ধে লিখেছেন যে, ক্ষমতা এবং অক্ষমতা দুয়েরই মৌলিক রূপ এক। ওরা একথা স্বীকার করবেন কিনা জানি না। ডবদুলাল । হ্যা, হ্যা খুব স্বীকার করেন—এই তো সেদিন আমায় বলছিলেন যে ঈশান আর সত্যবাহন দুই সমান—এ বলে আমায় দেখ আর ও বলে আমায় দেখ । আরে দেখব আর কি ? এরও যেমন কানকাটা খরগোশের মতন চেহারা, ওরও তেমনি হা-করা বোয়াল মাছের মতন চেহারা । সত্যবাহন । কি ! এত বড় আস্পর্ধা ! আমায় কানকাটা খরগোশ বলে । so নাটক O 2) سیت-سد : . از : ভবদুলাল। না, না, আপনাকে তো তা বলেন নি— আপনাকে বোয়াল মাছ বলেছে । নিকুঞ্জ । কি অভদ্র ভাষা। আমায় কিছু বললে ? ভবদুলাল । আমি জিজ্ঞেস করেছিলুম—তা, বললে, নিকুঞ্জ কোনটা ? ঐ ছাগলী দাড়ি, না যার ডাবা হ কোর মতো মুখ ? নিকুঞ্জ । আপনি কি বললেন ? ভবদুলাল । আমি বললাম ডাবা হ'কো । নিকুঞ্জ । নাঃ এক-একটা মানুষ থাকে, তাদের মাথায় খালি গোবর পোরা । ভবদুলাল । কি আশ্চম ! শ্ৰীখণ্ডবাবুও ঠিক তাই বলেন । বলেন ওদের মাথায় খালি গোবর—তাও শুকিয়ে ঘুটে হয়ে গেছে । সত্যবাহন । এ-সব আর সহ্য হয় না । মশায়, আপনি ওখানে ছিলেন—বেশ ছিলেন । আবার আমাদের হাড় জ্বালাতে এলেন কেন ? ঈশান । আহা, ও কি ? উনি আগ্রহ করে আসঙ্কেন সে তো ভালোই । জনাৰ্দন। হ্যা, বেশ তো, উনি আসুন না। সত্যবাহন । আগ্রহ কি নিগ্রহ কে জানে ? নিকুঞ্জ । হ্যা, অত অনুগ্রহ নাই করলেন ? ভবদুলাল। হাঃ, হাঃ, হাঃ, ওটা বেশ বলেছেন। ছেলেবেলায় আমাদের সঙ্গে একজন পড়ত—সেও ঐরকম কথা গোলমাল করত। প্রাক্ষাকে বলত দ্রাহ্মা ! ঐ ‘ক’-এ মূর্ধণ্য 'ষ'-এ ক্ষ, আর ‘হ’-এ "ম’ মা, বুঝলেন না ? সত্যবাহন । হ্যাঁ, হ্যা, বুঝেছি মশাই । ভবদুলাল । আমরা ছেলেবেলায় পড়েছিলাম—খৃগাল ও প্ৰাক্ষা ফল । প্রাক্ষা বলে একরকম ফল আছে –মানে আছে কিনা জানি না, কিন্তু তর্ক করে তো লাভ নেই । মনে করুন যদি বলেন নেই, তা সে আপনি বললেও আছে, না বললেও আছে । তাহলে তর্ক করে লাভ কি ? কি বলেন ? সত্যবাহন । আপনার কাছে কোনো কথা বলাই বৃথা । ভবদুলাল। না, না, বৃথা হবে কেন ? ওটা আমার চলচ্চিত্তচঞ্চরিতে দিয়েছি তো । আপনার নাম করেই দিয়েছি । সত্যবাহন । আমার নাম করেছেন, কিরকম ? আপনি তো সাংঘাতিক লোক দেখছি মশায় । দেখুন, ঐ যা-তা লিখবেন আর আমার নামে চালাবেন-এ আমি পছন্দ করি না। ভবদুলাল। বাঃ ! নাম করব না ? তা নইলে শেষটায় লোকে আমায় চেপে ধরবে আর আমি জবাব দিতে পারব না, তখন ? সে হচেছ না। ঐ ইশানবাবুর বেলাও তাই। যার যার গান, তার-তার নাম । সত্যবাহন। দেখুন, আপনি সহজ কথা বুঝবেন না, আবার জেদ করবেন । 8Οώ