পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রকাশিকার কৈফিয়ত

 দেরিতে হলেও সুকুমার সমগ্র রচনাবলী-র দ্বিতীয় খণ্ড পাঠক বন্ধুদের হাতে তুলে দিতে পেরে আজ আমরা আনন্দিত। অনেক বাধা, অনেক সঙ্কট পেরিয়ে এসেছি গত একটা বছর আমরা। যে কথা অতীতে আপনাদের বলার সুযোগ মেলে নি আমাদের।

 সুকুমার সমগ্র রচনাবলীর প্রথম খণ্ড ছাপা হচ্ছিল এই শহরেরই কোনো-এক প্রখ্যাত ছাপাখানায়। আমাদের কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই ছাপাখানার কর্তৃপক্ষ নাকি বিদ্যুৎ সঙ্কট জনিত কারণে ছাপাখানার উপর লে-অফ প্রয়োগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন সেদিন। তার পুরোপুরি শিকার হয়ে পড়ল আপনাদের শুভেচ্ছাপুষ্ট এই ছোট্টো এশিয়া। আংশিক সরবরাহ পেলাম একতরফাভাবে মুদ্রক সংস্থর চুক্তি-লঙ্ঘিত বর্ধিত হারে।

 যে কারণে গ্রাহক-বন্ধুদের সময়মতো বই দিয়ে উঠতে পারি নি আমরা। উপরন্তু সেই একই বই নূতন করে ছাপতে হয়েছে অফসেটে, বিরাট এক আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছে আমাদের এই একই কারণে।

 সুকুমার সমগ্র রচনাবলীর পাঠের ক্ষেত্রেও বলতে হচ্ছে—সম্প্রতি আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড প্রকাশিত সুকুমার সাহিত্য সমগ্র পড়ে আমরা জানতে পারলাম লেখকের বহু লেখার নাকি হদিশ মিলেছে নতুন করে আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের শিখায়। অবশ্য উক্ত গ্রন্থের প্রকাশিত দুই খণ্ডে আমরা এমন অনেক লেখা পড়লাম যেগুলি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গ্রন্থে উপেন্দ্রকিশোরের নামে মুদ্রিত হয়েছিল। এমন-কি, স্বয়ং সম্পাদক মহাশয়ের সম্পাদিত মাসিক পত্রিকায় পুরানো সন্দেশ থেকে এই শিরোনামায় বেশ কিছু লেখা মুদ্রিত হয়েছিল—যার লেখক হিসাবে আমরা পড়েছিলাম উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর নাম। হঠাৎ রচনাবলী প্রকাশকালে সেই-সব লেখাগুলিই সুকুমার সাহিত্য সমগ্র-তে স্থান পেয়েছে। আমরা বেশ কিছুটা হতবাক হয়েছি এ ব্যাপারে। বাঙলা সাহিত্য সেও আজ যেন মুক হয়ে গিয়েছে। জানি না প্রকৃত অলোকপাত কে করতে পারেন আজ আমাদের।

 যাঁদের সহযোগিতায় এ-বই-এর সুষ্ঠু প্রকাশ সম্ভব হয়েছে তাঁদের প্রত্যেকের জন্য রইল আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। শত ব্যস্ততার মধ্যেও এ বই-এর সম্পাদনার গুরু দায়িত্ব বহন করেছেন শ্রীসমীর মৈত্র, অকুণ্ঠ সহযোগিতা পেয়েছি শ্রীমতী কৃষ্ণা মৈত্রের কাছ থেকেও। পুরানো কালের হারিয়ে যাওয়া অমূল্য পত্র-পত্রিকা ও গ্রন্থরাজি দিয়ে মূল পাঠ উদ্ধারে সহযোগিতা করেছেন শ্রীসনৎকুমার গুপ্ত, শ্রীদেবদত্ত দে, শ্রী অশোককুমার মিত্র, শ্রীশ্যামাপ্রসাদ সরকার—এঁদের জন্য রইল আমার আন্তরিক অভিনন্দন। অভিনন্দন প্রাপ্য এক্‌লা প্রিণ্টিং প্রেস প্রাইভেট লিমিটেড-এর প্রতিটি কর্মীবন্ধুর। তাঁদের মরণপণ সংগ্রামই সম্ভব করে তুলেছে এ-বই-এর প্রকাশ আজকের এই শুভ মুহর্তে। বিশেষ করে ভুলবার নয় শ্রীকার্তিক ঘোষের আন্তরিক সহযোগিতার কথা। আর শুভেচ্ছা রইল আমার সহকর্মীদের প্রতি। তাঁদেরও সকলরকম সহযোগিতা এগিয়ে এনেছে সুষ্ঠুভাবে এ বই-এর প্রকাশকালকে। ভীড় করে আসছে আরো একাধিক বন্ধু-বান্ধব আপনজনদের কথা—যাঁদের সহযোগিতা নিয়ে বেরুল এ-বই।

 সবশেষে ভালো-মন্দ বিচারের ভার ছেড়ে দিলাম আমার ছোট্টো পাঠকবন্ধুদের উপর—তাদের ভালো লাগলেই সার্থক মনে করব এই উদ্যোগ।