পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অর্থ তার চক্ল পথে টানি ঘোরায় আপন ঘানি— বাক-অৰ্থ দোহে যুক্ত নিত্য বসবাস ইতি কালিদাস ৷ আজ কেন বুদ্ধ পথ খুলে মন্ত্রাঘাত করি শব্দ মূলে ছিন্ন করে শব্দের বাঁধন--"অসাধ্য সাধন । কাল চক্র বৃহ ভেদ করি উর্ধ্বগতি কুণ্ডলীর মুক্ত পথ ধরি জাগে ঐ নিদ্রিত অশনি— হাহাকার ক্লাদনের ধ্বনি । অন্ধকার রাতে অঙ্গহীন শব্দের পশ্চাতে কার তপ্ত নিশ্বাসের বুদ্ধ অডিশাপ জপিছে প্রমাপ ? বিশ্বকৰ্মার মন্ত্রপাঠ হলদে সবুজ ওরাং ওটাং ইটপাটকেল চিত পটাং গন্ধ গোকুল হিজিবিজি নো এ্যাডমিশন তৈরি বিজি নন্দী ভৃঙ্গ সারেগামা নেই মামা তাই কানা মামা মুশকিল আসান উড়ে মালি ধৰ্মতলা কর্মখালি চীনে বাদাম সদি কাশি বুটিংপেপার বাঘের মাসি । গুরুজি। দাড়াও আমাদের গতি যে ক্রমশ মন্দীভূত হয়ে আসছে সেটা কি তোমরা অনুভব করেছ ? সকলে । আজে— ক্রমশই কমে আসছে— গুরুজি। এর কি কোনো কারণ নির্ণয় করতে পারছ ? কেউ কি পশ্চাতে পড়ে থাকছু ? বেহারী। আক্তে, আপনার পরেই এই তো আমি আসছি।-- হরেকানন্দ । তার পরেই আমি শ্রীহরেকানন্দ– জগাই । তার পর আমি জগাই— পটলা । তার পর আমি-- গুরুজি । তবে এর কারণ কি ? শব্দের আকর্ষণটা বেশ অনুভব করছ কি ? পটলা । আঞ্জে, আমার বাকা পিছন দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে । গুরুজি। সর্বনাশ ! তবে একবার নিধিশেষ মন্তটা বেশ করে উচ্চারণ করে শক্তি সঞ্চার করে— তারপর তাকিয়ে দেখ কিছু দেখা যায় কিনা - সকলে । গেী গাবোঁ গাবঃ--গেী গাবেী গাবঃ—গেী গাবেী গীর8 – বিশ্বম্ভর । ইত্যমর: সকলে । কে শবদ করে ? পটলা । সেই লোকটা ! সকলে । সর্বনাশ ! ও আবার চায় কি ? বিশ্বম্ভর। ঐ যে, তোমরা কোথায় যাচ্ছ সেইথেমে যাব । গুরুজি । বৎস বিশ্বস্তর, তুমি আসলেই যদি, তবে এমন পশ্চাতে পড়ে থাকছু কেন ? বিশ্বম্ভর । আঞ্জে- বেজায় পরিশ্রম লাগছে--- গুরুজি ৷ কেন ? তুমি কি সম্যকরূপে মন্ত্রে আরোহণ 850 করতে পার নাই ? তুমি কি কোনোরূপ ভার বহন করে আনছ ! বিশ্বম্ভর । আজে-এই শরীরটা— ওরুজি। ও-সব ছেড়ে দাও—কিছুক্ষণ ধুকধুক মন্ত্র জগ কর—ও সব স্থল সংস্কার কেটে যাবে— ছাত্নগণের মন্ত্ৰজগ বিশ্বম্ভর । আমি ভাবছিলুম— সকলে। ভাবছিলে? সর্বনাশ!—সর্বনাশ! ভেব না,ভেব না— গুরুজি । শব্দের ঘাড়ে চিন্তাকে চাপাচ্ছ-? ছিঃ ! এমন করে শব্দশক্তি মুনি কোরো না-আমার পূর্ব-উপদেশ স্মরণ কর --শব্দের সঙ্গে তার অর্থের যে একটা সূক্ষ ভেদাভেদ আছে সাধারণ লোকে সেটা ধরতে পারে না । বেহারী। তাদের শব্দজান উজ্জ্বল হয় নি— হরেকানন্দ । তারা শব্দের রূপটিকে ধরতে জানে না— গুরুজি । তারা ধরে তার অর্থকে । তারা শব্দ চক্লের আবর্তের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যায়। যেমন কর্মবন্ধন, যেমন মোহবন্ধন, যেমন সংসারবন্ধন, তেমনি শব্দবন্ধন । সকলে । শবদ বন্ধন পড় না—পড় না— গুরুজি । শব্দকে যে অর্থ দিয়ে ভোলায়—সে অর্থপিশাচ । শযদকে আটকাতে গিয়ে সে নিজেই আটকা পড়ে । নিজেকেও ঠকায় শব্দকেও বঞ্চিত করে । সে কেমন জানো ? এই মনে কর, তুমি বললে পৃথিবী—তার অর্থ করে দেখ দেখি ?—সূর্য নয় চন্দ্র নয় আকাশ নয় পাতাল নয়—সব বাদ—শুধু পৃথিবী । এরা নয় ওরা নয় তারা নয়—এ-সব কি উচিত ? আবার যদি বল "পৃথিবী গোল”—তার সঙ্গে অর্থ জুড়ে দেখ দেখি, কী ভয়ানক সংকীর্ণতা –পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে তা বলা হল না— পৃথিবীর উত্তরে কি দক্ষিণে কি, তা বলা হল না—তার তিন ভাগ জল এক ভাগ স্থল, তা বলা হল না—তবে বলা হল কি ? গোট পৃথিবীটার সবই তো বাদ গেল ! এটা কি ভালো ? বিশ্বম্ভর । আজ্ঞে না—এটা তো ভালো ঠেকছে না--তাহলে কি করা যায় ? গুরুজি । তাই বলেছিলাম—শব্দের বিষদাঁত যে অর্থ, আগে তাকে ভাঙা । শুধু পৃথিবী নয়, শুধু গোল নয় শুধু এটা নয়, শুধু ওটা নয় ; আবার এটাই ওটা, ওটাই সেটা—তাও নয়। তবে কী ? না সবই সব ৷ তাকেই আমরা বলি গেী গাবেী গাবঃ– গেী গাবেী গাবঃ– , হলদে সবুজ ওরাং ওটাং—ইত্যাদি মন্ত্রপাঠ বিশ্বকৰ্মার আবির্ভাব বিশ্বকমা । নিঝুম তিমির তীরে শব্দ হারা অর্থ আসে ফিরে সুকুমার সমগ্ন রচনাবলী ॥ ২