পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছড়া

টিক্ টিক্ টং

টিক্-টিক্ চলে ঘড়ি টিক্-টিক্,টিক্,
একটা ইঁদুর এল সে সময়ে ঠিক্!
ঘড়ি দেখে এক লাফে তাহাতে চড়িল,
টং করে অমনি ঘড়ি বাজিয়া উঠিল।
অমনি ইঁদুর ভায়া লেজ গুটাইয়া,
ঘড়ির উপর থেকে পড়ে লাফাইয়া!
ছুটিয়া পালায়ে গেল আর না আসিল
টিক্-টিক্-টিক্- ঘড়ি চলিতে লাগিল!

হাতে ধনু, পিঠে তূণ, বাছা তবু কেঁদে খুন!
তূণভরা আছে তীর, কাঁদ কেন মহাবীর?
ভাঙা ধনু, কাঁদ তাই? আহা! আহা! মরে যাই।

সন্দেশের গন্ধে বুঝি দৌড়ে এলে মাছি?
কেন ভন ভন হাড়-জ্বালাতন, ছেড়ে যেও না বাচি!
নাকের গোড়ায় শুড়শুড়ি দাও, শেষটা দেবে ফাঁকি?
সুযোগ বুঝে সুড়ুৎ করে হুল ফোটাবে নাকি?

মমিদো পুতুল আসছে তেড়ে, কাঠের ঘোড়া খটখটাং
সামনেওয়ালা জলদি ভাগো, নৈলে পরে চিৎপটাং।

ডাক্তার ফস্টার
ইস্কুল মাস্টার।
বেত তার চটপট,
ছাত্রেরা ছটফট—
ভয়ে সব পস্তায়,
বাড়ি ছেড়ে রাস্তায়,
গ্রাম ছেড়ে শহরে,
গয়া কাশী লাহোরে।
ফিরে আসে সন্ধ্যায়
পড়ে শোনে মন দ্যায়।

বড়ো তুমি লোকটি ভালো,
চেহারাও নয়তো কালো—
তবু কেন তোমায় ভালোবাসছি নে?
কেন তা তো কেউ না জানে,
ভেবে কিছু পাই নে মানে,
যতই ভাবি ততই ভালোবাসছি নে॥

জংলাবনের পাগলাবুড়ো আমায় এসে বলে,
“আড়াই বিঘা সমুদ্রেতে কাঁটাল কত ফলে?”
আমিও বলি আন্দাজেতে, “বলছি শোনো কত—
তোমাদের ঐ ঝিঙের খেতে চিংড়ি গজায় যত।”

বাস রে বাস! সাবাস বীর!
ধনুকখানি ধরে,
পায়রা দেখে মারলে তীর—
কাগটা গেল মরে!

নন্দঘোষের শামলা গোরু ভাগল কোথায় লক্ষ্মীছাড়া?
নন্দ ছোটে বনবাদাড়ে, সন্ধানে ধায় বদ্যিপাড়া।
শেষ কালেতে, অর্ধরাতে হদ্দ হয়ে ফিরলে পরে—
বাসায় দেখে ঘুমোয় গোরু ল্যাজ গুটিয়ে গোয়ালঘরে।

আরে ছিছি, রাম, রাম! কলকাতা শহরে,
লাল ধুতি পরে খুদি তিনহাত বহরে।
মখমলি জামাজুতো, ঝকমকে টোপরে,
খায় দায়, গান গায়, রাস্তার ওপরে॥

বলছি ওরে, ছাগলছানা, উড়িস নে রে উড়িস নে।
জানিস তােদের উড়তে মানা— হাত-পাগুলো ছুঁড়িস নে।।

উঠোন কোণে কড়াই ছিল, পায়েস ছিল তাতে,
তাই নিয়ে কাক লড়াই করে কুঁকড়াে বুড়োর সাথে।
যুদ্ধ জিতে বড়াই ভারি, তখন দেখে চেয়ে—
কখন এসে চড়াইপাখি পায়েস গেছে খেয়ে।

খিলখিল্লির মুল্লুকেতে থাকত নাকি দুই বেড়াল।
একটা শুধােয় আরেকটাকে, “তুই বেড়াল, না মুই
বেড়াল?”

সেই থেকে হয় তর্ক শুরু, চীৎকারে তার ভূত পালায়,
আঁচড়কামড়, চকিবাজি, ধাঁই ধপাধপ চড় চালায়।