পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪৩১

অতীতের ছবি

ছিল এ-ভারতে এমন দিন
মানুষের মন ছিল স্বাধীন।
সহজ উদার সরল প্রাণে
বিময়ে চাহিত জগত পনে
আকাশে তপন তারকা চলে,
নদী যায় ভেসে, সাগর টলে,
বাতাস ছুটিছে আপন কাজে,
পৃথিবী সাজিছে নানান সাজে ।
ফুলে ফলে ছয় ঋতুর খেলা,
কত রূপ কত রঙের মেগা ।
মুখরিত বন পাখির গানে,
অটল পাহাড় মগন ধ্যানে।
নীলাকাশে ঘন মেঘের ঘটা,
তাহে ইন্দ্রধনু বিজলী ছটা,
তাহে বারিধারা পড়িছে ঝরি--
দেখিত মানুষ নয়ন ভরি।
কোথায় চলেছে কিসের টানে
কোথা হতে আসে, কেহ না জানে।
ভাবিত মানব দিবস-যামী,
ইহারি মাঝারে জাগিয়া আমি,
কিছু নাহি বুঝি কিছু না জানি,
দেখি দেখি আর অবাক মানি।
কেন চলি ফিরি কিসের লাগি
কখন ঘুমাই কখন জাগি,
কত কান্না হাসি মুখে ও সুখে
ক্ষুধা তৃষ্ণা কত বাজিছে বুকে।
জন্ম লভি জীব জীবন ধরে,
কোথায় মিলায় মরণ পরে?
ভাবিতে ভাবিতে অকুল প্রাণে
ভুবিত মনিব গভীর ধ্যানে।
অকূল রহস্য হিমিরতলে,
জ্ঞানজ্যোতির্ময় প্রদীপ জ্বলে,
সমাহিত চিতে যতন করি
চলেছে একেরই শাসন মানি,
লোকে লোকান্তরে একেরই বাণী।
এক সে অমৃতে হয়েছে হার
নিখিল জীবন-মরণ ধারা।
সে অমৃতজ্যোতি আকাশ ঘেরি,
অন্তরে বাহিরে অমৃত হেরি।
যাহা হতে জীব জনম লভে,
যাহা হতে ধরে জীবন সবে,
যাহার মাঝারে মরণ পরে
ফিরি পুন সবে প্রবেশ করে
তাহারে জানিবে যতন ধরি
তিনি ব্রহ্ম তারে প্রণাম করি।
আনন্দেতে জীব জনম ভে
আনন্দে জীবিত রয়েছে সবে।
অনিন্দে বিরাম লভিয়া প্রাণ
আনন্দের মাঝে করে প্রয়াণ।
শুন বিশ্বলোক, শুনহ বাণী
অমৃতের পুত্র সকল প্রাণী,
দিব্যধামবাসী শুনহ সবে
জেনেছি তাহারে, যিনি এ ভবে
মহান পুরুষ, নিখিল গতি,
তমসার পরে পরম জ্যোতি।
তেজোময় রূপ হেরিয়া তারে
স্তধ হয় মন, বচন হারে।
বামে ও দখিনে উপরে নীচে,
ভিতরে বাহিরে, সমুখে পিছে,