পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রশান্ত মুখে ভয়ের চিহ্নমাত্র নাই, তিনি সকলকে আশ্বাস দিতেছেন, উৎসাহের সঙ্গে বলিতেছেন, “দেহ নষ্ট হইয়া যায়, কিন্তু দেহের মধ্যে যে থাকে সে অমর-এই দেহে যখন প্রাণ থাকিবে না, আমি তখনো থাকিব।” একজন শিষ্য বলিলেন, “মৃত্যুর পর আপনাকে কোথায় কবর দিব?” সক্রেটিস বলিলেন, “যেখানে ইচ্ছা; কিন্তু মৃত্যুর পর আমায় পাইবে.কোথা?” এমন সময় জেলের প্রধান কর্মচারী কাদিতে কাদিতে বিষের পাত্র আনিয়া ধরিল এবং সক্রেটিসের কাছে ক্ষমা চাহিল। সক্রেটিস তাহাকে অশীর্বাদ করিয়া, হাসিমুখে বিষ পান করিলেন। তার পর শিষ্যদের সহিত কথা বলিতে বলিতে ক্রমে তিনি অবসন্ন হইয়া পড়িলেন। দেখিতে দেখিতে তাহার হাত-পা অবশ হইয়া শেষে মৃত্যু আসিয়া মহাপুরুষের জীবন শেষ করিয়া দিল। সক্রেটিস মরিয়া অমর হইলেন; তাঁহার নাম চিরকালের জন্য পৃথিবীর ইতিহাসে থাকিয়া গেল।

সন্দেশ—আষাঢ়, ১৩২৩


ফ্লরেন্স নাইটিঙ্গেল

 এক চাষার এক কুকুর ছিল, তার নাম ক্যাপ। একদিন এক দুষ্ট লোকে পাথর ছুড়িয়া ক্যাপের একটি পা খোঁড়া করিয়া দিল। চাষা ভাবিল, ‘এই খোঁড়া কুকুর লইয়া আমি কি করিব? এ আর আমার কোনো কাজে লাগিবে না। শেষটায় কুকুর বেচারাকে মারিয়া ফেলাই ঠিক হইল। একটি ছোটো মেয়ে, তার নাম ফুরেন্স, সে এই কথা শুনিতে পাইয়া বলিল, “আহা মারবে কেন? আমায় দেও, আমি ওকে সারিয়ে দেব।” তার পর সে ক্যাপকে বাড়িতে লইয়া তার পায়ে পট্টি বাঁধিয়া, তাহাতে ঔষধ দিয়া, সেঁক দিয়া রীতিমতো শুশ্রষা করিয়া কয়েক দিনের মধ্যেই তাহার খোঁড়া পা সারাইয়া দিল। তখন' সেই চাষা বলিল, “ভাগ্যিস আপনি ছিলেন, তা নইলে আমার এমন কুকুরকে আমি মিছামিছি মেরে ফেলতাম।”

 কেবল এই একটি ঘটনা নয়, প্রায়ই এমন দেখা যাইত যে, মেয়েটি হয়তো বাগানে বেড়াইতেছে, আর কাঠবিড়ালিগুলা তাহার কাছ হইতে খাবার লইবার জন্য চারিদিক হইতে ছুটিয়া আসিতেছে। বাড়ির ঘোড়াটা পর্যন্ত তাঁহার গলার আওয়াজ শুনিলে, বেড়ার উপর দিয়া গলা বাড়াইয়া দেখিত। ফুরেন্স নাইটিঙ্গেল বড়োলোকের মেয়ে, তাঁহার পয়সাকড়ির ভাবনা ছিল না, কোনো অভাব ছিল না। তাহার বাবারও বড়ো ইচ্ছা, ছেলেমেয়েরা সকলে - খুব ভালো লেখাপড়া শেখে। সুতরাং অল্প বয়স হইতেই যে ফুরেন্সের মনে লেখাপড়ার ঝোক ছিল সেটা কিছু আশ্চর্য নয়। কিন্তু লোকে যে ঐ বয়স হইতেই তাঁহাকে ভালোবাসিত এবং শ্রদ্ধা করিত, সেটা তাঁহার লেখাপড়ার বাহাদুরির জন্য নয়—তার কারণ এই যে, তিনি যেমন মনপ্রাণ দিয়া সকলকে ভালোবাসিতেন, লোকের সেবা করিতে পারিতেন এবং লোকের সুখে সুখী, দুঃখে দুঃখী হইতে পাল্পিতেন, এমন আর কেহ পারিত না। আশেপাশে

জীবনী
৬১