পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তাহারাই আগে মরে, যাহারা বাহিরে নানা অবস্থার মধ্যে আপনাকে বাঁচাইয়া রাখিতে পারে, তাহারাই টিকিয়া যায়। কাহারও গায়ে জোর বেশি, সে লড়াই করিয়া বাঁচে। কেহ খুব ছুটিতে পারে, সে শত্রুর কাছ হইতে পলাইয়া বাঁচে। কাহারও চামড়া মোটা, সে শীতের কষ্ট সহিয়া বাঁচে। কাহারও হজম বড়ো মজবুত, সে নানা জিনিস খাইয়া বাঁচে। কাহারও গায়ের রঙ এমন যে হঠাৎ চোখে মালুম হয় না, সে লুকাইয়া বাঁচে। বাঁচিবার মতো গুণ যাহার নাই সে বেচারা মারা যায়, অরি সেই-সব গুণ আর লক্ষণ যাহাদের আছে তাহারাই বাঁচিয়া থাকে, তাহাদেরই বংশ বিস্তার হয়, আর বংশের মধ্যে সেই-সব বাছা বাছা গুণগুলিও পাকা হইয়া স্পষ্ট হইয়া উঠে। এইরাপে আপনাকে বাঁচাইবার জন্য সংগ্রাম করিতে করিতে, বাহিরের নানা অবস্থার মধ্যে প্রত্যেক জন্তুর চেহারা নানারকম ভাবে গড়িয়া উঠে।

 ডারুইন দেখাইলেন, এইরূপে এবং আরো নানা কারণে, আপনা হইতেই এক-একটা জন্তুর চেহারা নানারকমে বদলাইয়া যায়। সেই কার গল্প তোমরা শুনিয়াছ, যার সবই ঠিক ছিল কেবল নলচে আর মালাটি বদল হইয়াছিল? এক-একটা জানোয়ারও ঠিক সেইরূপ নচে মালা সবই বদল করিয়া নূতন মতি ধারণ করে—তখন তাহাকে সম্পূর্ণ নূতন জন্তু বলিয়া ভুল হওয়া খুবই স্বাভাবিক।

 ডারুইনের কথা বলিতে গেলে দুটি গুণের কথা বিশেষ করিয়া বলিতে হয়—একটি তাঁহার অক্লান্ত অধ্যবসায় আর একটি তাহার মিষ্ট স্বভাব। তাহার শরীর কোনো কালেই খুব সুস্থ ছিল না—জীবনের শেষ চল্লিশ বৎসর সে শরীর একেবারে ভাঙিয়া পড়িয়াছিল। কিন্তু তাহার মনের শক্তি আশ্চর্যরকম সতেজ ছিল। প্রতিদিন ভোরের আগে ঘুম হইতে উঠিয়া তিনি বাগানে যাইতেন-সেখানে ফুল ফল মৌমাছি আর প্রজাপতির সঙ্গে পরিচয় করিতে করিতে কোনদিক দিয়া যে তাঁহার সময় কাটিয়া যাইত, কত সময় তাঁহার সে খেয়ালই থাকিত না।

 ডারুইনকে যাঁহারা জানিতেন, তাঁহারা বলেন যে, সকলকে প্রাণ দিয়া এমন ভালোবাসিতে আর কেহ পারে না। শুধু মানুষ নয়, পশুপক্ষী নয়, গাছের ফুলটিকে পর্যন্ত তিনি এমনভাবে স্নেহের চক্ষে দেখিতেন যে, লোকে অবাক হইয়া যাইত। ১৮৮২ খৃস্টাব্দে তিয়াত্তর বৎসর বয়সে তাঁহার মৃত্যু হইলে ইংরাজ জাতি সেই ‘অল্পবুদ্ধি’ ছাত্রকে পরম আদরে বিজ্ঞানবীর নিউটনের পাশে সমাধি দেন।


খোঁড়া মুচির পাঠশালা

 পোর্টসমাউথের বন্দরে এক খোঁড়া মুচি থাকিত, তাহার নাম জন পাউণ্ডস। ছেলে- বেলায় জন তাহার বাবার সঙ্গে জাহাজের কারখানায় কাজ করিত। সেইখানে পনেরো

জীবনী
৭৯