পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ১৮৩৫ খৃষ্টাব্দে স্কটল্যাণ্ডের এক সামান্য পল্লীগ্রামের এক নগণ্য পরিবারে এনড্র কার্নেগীর জন্ম হয়। তাঁর বয়স যখন তেরো বৎসর মাত্র তখন তাঁর বাবা উপার্জনের চেষ্টায় সপরিবারে আমেরিকায় চাকরি করতে যান। সেইখানে গিয়েই এক সুতোর কারখানায় তাঁতির মজুর হয়ে কার্নেগী মাসে সাড়ে বারো টাকা রোজগার করতে আরম্ভ করলেন। এই তাঁর প্রথম রোজগার। তার পর চৌদ্দ বছর বয়সে তার আরেকটু ভালো একটা চাকরি জুটল, তিনি এক টেলিগ্রাফ অফিসের ছোকরা পিয়নের কাজ পেলেন। এই কাজ তিনি কেমন করে জোগাড় করলেন, সে গল্পটিও বড়ো চমৎকার।

 টেলিগ্রাফ অফিসের দরজায় বিজ্ঞাপন ছিল, “ছোকরা পিয়ন চাই"। তাই দেখে কার্নেগী খোঁজ নেবার জন্য ভিতরে ঢুকলেন। টেলিগ্রাফের কেরানী একটা অচেনা ছোকরাকে ঘরের মধ্যে ঢুকতে দেখেই, হাঁক দিয়ে বললে, “কি চাও?” কার্নেগী বললেন, “বড়োসাহেবকে চাই।” কেরানী তেড়ে উঠে বললে, “যাও, যাও, দেখা হবে না।” পরের দিন সকালে কার্নেগী আবার ঠিক তেমনিভাবে সেখানে গিয়ে হাজির। কেরানী দেখলে, সেই ছোকরা আবার এসেছে। সে আবার জিজ্ঞাসা করলে, “কি চাও?” জবাব হল, “বড়ো-সাহেবকে চাই।” সেদিনও কেরানী তাকে চটপট ঘর থেকে বার করে দিল। পরের দিন আবার সেই সময়ে সেই ছোকরা এসে হাজির-বলে, “বড়ো-সাহেবকে চাই।” ভাবল, ব্যাপারটা কি? অচ্ছিা, একবার বড়ো-সাহেবকে জিজ্ঞাসা করা যাক। বড়ো-সাহেব সব শুনে বললেন, “পাঠিয়ে দাও তো, দেখি ছোকরা কি চায়।” সেইদিনই কার্নেগী টেলিগ্রাফ অফিসের কাজে ভর্তি হলেন। বাপ-মায় ভাবলেন, ছেলে ‘চাকরে’ হয়ে উঠল—বেশ দুপয়সা রোজগার করবে।

 পিয়নের কাজ করতে করতেই কার্নেগী টেলিগ্রাফের কলকায়দা সব শিখে ফেললেন, আর কিছুদিন বাদেই তিনি সেখানকার রেলস্টেশনে তারওয়ালা বা অপারেটর হয়ে বসলেন। তার পর দেখতে দেখতে ক্রমে টেলি-বিভাগের বড়ো-সাহেব বা সুপারিণ্টেণ্ডেণ্ট হতেও তাঁর বেশি দেরি লাগল না। এই সময় থেকে তিনি রেলগাড়ি আর খনির তেলের ব্যবসা করে খুব টাকা করতে আরম্ভ করেন। লাভের টাকা আবার নুতন নূতন ব্যবসায় খাটিয়ে তিনি বড়ো-বড়ো কারবার জমিয়ে তুললেন। তার পর ক্রমে পাঁচসাতটা প্রকাণ্ড লোহার কারখানা কিনে ফেলে তিনি নিজে সেইগুলো চালাতে লাগলেন। পঁয়ত্রিশ বৎসর বয়স না হতেই তিনি পৃথিবীর মধ্যে একজন নামজাদা লোহার মালিক হয়ে উঠেছিলেন।

 এমনি করে ১৯০১ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করে, তিনি ছাপান্ন বৎসর বয়সে সব বিষয়কর্ম থেকে অবসর নিয়ে স্কটল্যাণ্ডে সেই তাঁর জন্মস্থানে গিয়ে বসলেন। বললেন,“রোজগার যথেষ্ট করেছি, এখন এই বুড়ো বয়সে আর টাকা টাকা করে ছুটে বেড়ানো ভালো দেখায় না। এতদিন যা সঞ্চয় করেছি এখন দানের মতো দান করে তার সদ্ব্যবহার করতে হবে। সেই থেকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি তাঁর দানব্রত পালন করে গিয়েছেন।

 কার্নেগীর মতো অথবা তার চাইতেও বড়োলোক পৃথিবীতে আরো আছেন—কিন্তু এমন অজস্রভাবে দান আর কেউ করেছেন কিনা সন্দেহ। কত দেশে, কত শহরে শহরে গ্রামে

জীবনী
৯১