বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাতাসের নিশ্বাস বলিতেছে, ‘ইউরিডিস, ইউরিডিস—’ পাখিরা শাখায় শাখায় করুণ সুরে গান করিতেছে ‘ইউরিডিস, ইউরিডিস!’

 এমনিভাবে অস্থিরমনে যখন তিনি ঘুরিতেছেন, তখন একদিন মদের দেবতা ব্যাকাসের সঙ্গীরা তাঁহাকে ধরিয়া বলিল, “তুমি ফুর্তি করিয়া বীণা বাজাও, আমরা নাচিব।” কিন্তু অর্ফিয়ুসের মনে সে স্ফূর্তি নাই, তাই বীণার তারেও কেবল দুঃখের সুরই বাজিতে লাগিল। তখন মাতালেরা রাগিয়া বলিল, “মার ইহাকে—এ আমাদের আমোদ মাটি করিতেছে।” তখন সকলে মিলিয়া অর্ফিয়ুস্‌কে মারিয়া তাহার দেহ নদীতে ভাসাইয়া দিল। সেই দেহ ইউরিডিসের নাম উচ্চারণ করিতে করিতে ভাসিয়া চলিল। শূন্যে অর্ফিয়ুসের আনন্দধ্বনি শুনিয়া সকলে বুঝিতে পারিল আবার তিনি ইউরিডিসকে ফিরিয়া পাইয়াছেন।

 জলে স্থলে নদীর কলস্রোতে ঝরণার ঝর্ঝর শব্দে আনন্দ-কোলাহল বাজিয়া উঠিল।

সন্দেশ—১৩২৫


খৃস্টবাহন

 তার নাম অফেরো। অমন পাহাড়ের মতো শরীর, অমন সিংহের মতো বল, অমন আগুনের মতো তেজ, সে ছাড়া আর কারও ছিল না। বুকে তার যেমন সাহস, মুখে তার তেমনি মিষ্টি কথা। কিন্তু যখন তার বয়স অল্প, তখনই সে তার সঙ্গীদের ছেড়ে গেল; যাবার সময় বলে গেল, “যদি রাজার মতো রাজা পাই, তবে তার গোলাম হয়ে থাকব। আমার মনের মধ্যে কে যেন বলে দিচ্ছে, তুমি আর কারো চাকরি কোরো না; যে রাজা সবার বড়, সংসারে যার ভয় নেই, তারই তুমি খোঁজ কর।” এই বলে অফেরো কোথায় জানি বেরিয়ে গেল।

 পৃথিবীতে কত রাজা, তাদের কত জনের কত ভয়। প্রজার ভয়, শত্রুর ভয়, যুদ্ধের ভয়, বিদ্রোহের ভয়—ভয়ে কেউ আর নিশ্চিন্ত নেই। এরকম হাজার দেশ ছেড়ে ছেড়ে অফেরো এক রাজ্যে এল, সেখানে রাজার ভয়ে সবাই খাড়া! চোরে চুরি করতে সাহস পায় না, কেউ অন্যায় করলে ভয়ে কাঁপে। অস্ত্রশস্ত্রে সৈন্যসামন্তে রাজার প্রতাপ দশদিক দাপিয়ে আছে। সবাই বলে, ‘রাজার মতো রাজা।’ তাই শুনে অফেরো তার চাকর হয়ে রইল।

 তারপর কতদিন গেল—এখন অফেরো না হলে রাজার আর চলে না। রাজা যখন সভায় বসেন অফেরো তাঁর পাশে খাড়া। রাজার মুখের প্রত্যেকটি কথা সে আগ্রহ করে শোনে, আর অবাক হয়ে ভাবে, ‘যদি রাজার মত রাজা কেউ থাকে, তবে সে এই!’

 তারপর একদিন রাজার সভায় কথায় কথায় কে যেন শয়তানের নাম করছে।

৯৬
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী