বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/২১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

(৩)

 কতগুলো ছেলে ছাতের উপর হুড়োহুড়ি করে খেলা করছে—এমন সময়ে একটা মারামারির শব্দ শোনা গেল। তার পরেই হঠাৎ গোলমাল থেমে গিয়ে সবাই মিলে “হারু পড়ে গেছে” বলে কাঁদতে কাঁদতে নীচে চলল।

 খানিক বাদেই শুনি একতলা থেকে কান্নাকাটির শব্দ উঠছে। বাইরের ঘরে যদুর বাবা গণেশবাবু ছিলেন—তিনি ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “কী হয়েছে?” শুনতে পেলেন ছেলেরা কাঁদছে, “হারু পড়ে গেছে।” বাবু তখন দৌড়ে গেলেন ডাক্তার ডাকতে।

 পাঁচ মিনিটে ডাক্তার এসে হাজির—কিন্তু হারু কোথায়? বাবু বললেন, “এদিকে তো পড়ে নি, ভেতর বাড়িতে পড়েছে বোধহয়।” কিন্তু ভেতর বাড়িতে মেয়েরা বললেন, “এখানে তো পড়ে নি—আমরা তো ভাবছি বার বাড়িতে পড়েছে বুঝি।” বাইরেও নেই, ভেতরেও নেই, তবে কি ছেলে উড়ে গেল? তখন ছেলেদের জিজ্ঞাসা করা হলো, “কোথায় রে? কোথায় হারু?” তারা বললে, “ছাতের উপর।” সেখানে গিয়ে তারা দেখে, হারুবাবু অভিমান করে বসে বসে কাঁদছেন! হারু বড় আদুরে ছেলে, মারামারিতে সে পড়ে গেছে দেখেই আর সকলে মার খাবার ভয়ে সেখান থেকে চম্পট দিয়েছে। “হারু পড়ে গেছে” বলে এত যে কান্না, তার অর্থ, সকলকে জানানো হচ্ছে যে “হারুকে আমরা ফেলে দিই নি—সে পড়ে গেছে বলে আমাদের ভয়ানক কষ্ট হচ্ছে।”

 হারু তখন সকলের নামে বাবার কাছে নালিশ করবার জন্য মনে মনে অভিমান জমিয়ে তুলছিল—হঠাৎ তার বাবাকে লোকজন আর ডাক্তারসুদ্ধ এগিয়ে আসতে দেখে, ভয়ে তার আর নালিশ করাই হলো না। যা হোক, হারুকে আস্ত দেখে সবাই এমন খুশি হলো যে শাসনটাসনের কথা কারো মনেই এল না।

 সবচেয়ে বেশি জোরে কেঁদেছিলেন হারুর ঠাকুরমা। তিনি আবার কানে শোনেন কিছু কম। তাঁকে সবাই জিজ্ঞেস করল, “আপনি এত কাঁদছিলেন কেন?” তিনি বললেন, “আমি কি অত জানি? দেখলুম ঝিয়েরা কাঁদছে, বৌমা কাঁদছেন, তাই আমিও কাঁদতে লাগলুম—ভাবলুম একটা কিছু হয়ে থাকবে।”

সন্দেশ—১৩২৫


কুকুরের মালিক

 ভজহরি আর রামচরণের মধ্যে ভারি ভাব। অন্তত, দুই সপ্তাহ আগেও তাহাদের মধ্যে খুবই বন্ধুতা দেখা যাইত।

 সেদিন বাঁশপুকুরের মেলায় গিয়া তাহারা দুইজনে মিলিয়া একটা কুকুরছানা কিনিয়াছে। চমৎকার বিলাতি কুকুর—তাহার আড়াই টাকা দাম। ভজুর পাঁচসিকা

২০৬
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী