পাতা:সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

৬৮
সুনির্মল বসুর

ভোরের আকাশে আলোর আমেজ করে ওঠে ঝলমল,
শাখায় শাখায় শুরু হয়ে যায় পাখীদের কোলাহল;
শতেক পাখীর চেনা-চেনা সুর কানে আসে অনিবার,
কোকিল পাখীর প্রথম কাকলি শুনিলাম মাঝে তার।
বহুদিন পরে শুনি কোকিলের আকুল-করা সে গীত,
সেই ডাকে যেন পেলাম প্রথম ফাগুনের ইঙ্গিত।
ফুটি-ফুটি করে পলাশের ফুল, উঠি ডালে ডালে তার,
জড় করি ফুল, রাঙা-তুল্ তুল্, শোভায় চমৎকার।
উঁচুনীচু ডাঙা, মাঝে মাঝে ভাঙা, তার পাশে শর-বন,
সেই শর তুলে নিয়ে আসি মোরা আনন্দে নিমগন।
পূজার আগেতে কুল খেতে মানা, কুলতলা দিয়ে যাই;
জিভে জল যেন জ’মে ওঠে যত কুলের গন্ধ পাই।
ঘাসে জ’মে আছে রাতের শিশির, পথটি পিছল রয়,
পা-টি টিপে টিপে হাঁটি সাবধানে, আছাড় খাবার ভয়।
মনে পড়ে সেই নদীর চড়ার শালিখ পাখীর দল,
শালুক ফুলের মধু খেতে এসে করে শুধু কোলাহল;
হাততালি দিয়ে শালিখ তাড়াই, পালায় পাখীর কুল,
তুলে নিয়ে আসি মায়ের পূজায় শালুক পদ্মফুল।

আলোছায়া-মাখা আঙিনায় আঁকা বিচিত্র আলিপন,
বিদ্যাদায়িনী বাণীর পূজার হ’ল সেথা আয়োজন।
বাসন্তী-রং শাড়ি-পরা যত কচি মেয়ে অবিরল,
তুল্‌তুলে তারা ফুল তুলে আনে চুল খুলে দলে দল।
আজ পড়া নাই, কোনো তাড়া নাই, পাড়া জুড়ে হৈ চৈ,
পড়ুয়ারা আজ বেপরোয়া হ’ল, ছুঁতে নাই আজ বই।
গুরুজন আজ দেবে নাকো বাধা, পড়াশোনা নাই আর,
বই যদি ছুঁই বকুনি লাগায়, বিপরীত ব্যবহার।