পাতা:সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শ্রেষ্ঠ কবিতা
৭৭

সাঁওতালদের বস্তিতে

আসবি কি তুই আমার সাথে সাঁওতালদের বস্তিতে?
আয় তা হ’লে, কিন্তু আমায় পারবি না ভাই দোষ দিতে।

বন-নিরালায় পাহাড়তলায় সাঁওতালদের আস্তানা,
উঁচুনীচু পাহাড়ী পথ, পীচ-ঢালা সে রাস্তা না।

নাই সেখানে অট্টালিকা, বিজ্‌লীবাতি জ্বল্‌জ্ব’লে,—
জংলাপথে সাঁঝ-সকালে পাহাড়ীদের দল চলে।

ভদ্রলোকে যায় না সেথা, যায় না সেথা সভ্য যে,
নয়ন-মনের চটক্‌দারী নাইকো কোনো দ্রব্য যে।

জংলা গাঁয়ে জংলী থাকে পাহাড় ঘেরা অঞ্চলে,
আমার মত জংলী যারা তাদের হোথায় মন চলে।

ঐ দেখা যায় পল্লী তাদের জংলা-দেবীর অঙ্গনে,
শহর ছেড়ে ঐ নিভৃতে, আয় রে, আমার সঙ্গ নে।

ঐ শোনা যায় মাদল বাজে, আদুল গায়ে বাচ্চারা
হল্লা করে নদীর ধারে, আজ যে মায়ের কাছছাড়া।

আজ যেন কোন্ মহোৎসবে মাতলো ওরা গ্রামবাসী,
বাজছে ঢোলক, বাজছে মাদল, বাজছে অবিরাম বাঁশি।

ঐ মেয়েরা কাল্‌চে চুলে লাল্‌চে ফুলের সাজ প’রে,
মাদল বাঁশির তালের সাথে গান করে আর নাচ ধরে।

স্ফুর্তি ওদের উছ্‌লে পড়ে; শিশুর মত সরল তো,
তৃপ্তি ওদের নাশ করে না কৃত্রিমতার গরল তো।

আমার আছে সাঁওতালদের ছেলে মেয়ে বৌ চেনা,—
সর্বনাশী প্রলয়-বাঁশি ওদের কানে পৌঁছে না।

কারুর কিছুই ধার ধারে না, দুঃখ নেই একরত্তি তো,
খাওয়া-পরার জন্যে কারুর মুখ চাহে না, সত্যি তো।