পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

সুরু করেছিলুম, কিন্তু মালমসলা এতই হাল্‌কা ওজনের, যে, নির্বিচারে পুপুও দিল যোগ। তার একটা লোককে রেখেছিলুম, তার কথা হবে পরে।

 অনেক গল্প সুরু হয়েছে এই ব’লে যে, এক যে ছিল রাজা। আমি আরম্ভ করে দিলুম এক যে আছে মানুষ। তারপরে লোকে যাকে বলে গপ্‌পো, এতে তারো কোনো আঁচ নেই। সে মানুষ ঘোড়ায় চ’ড়ে তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে গেল না। একদিন রাত্রি দশটার পর এল আমার ঘরে। আমি বই পড়ছিলুম। সে বললে, দাদা, ক্ষিদে পেয়েছে।

 রাজপুত্তুরের গল্প অনেক শুনেছি; কখনোই তার ক্ষিদে পায় না। কিন্তু এর ক্ষিদে পেয়ে গেল গোড়াতেই, শুনে খুসি হলুম। ক্ষিদে-পাওয়া লোকের সঙ্গে ভাব করা সহজ। খুসি করবার জন্যে গলির মোড়ের থেকে বেশি দূর যেতে হয় না।

 দেখলুম, লোকটর দিব্যি খাবার সখ। ফরমাস করে মুড়োর ঘণ্ট, লাউ-চিংড়ি, কাঁটাচচ্চড়ি; বড়ো বাজারের মালাই পেলে বাটিটা চেঁচেপুঁছে খায়। এক-একদিন সখ যায় আইস্‌ক্রিমের। এমন ক’রে খায় সে দেখবার যোগ্য। মজুমদারদের জামাইবাবুর সঙ্গে অনেকটা মেলে।

 একদিন ঝমাঝম বৃষ্টি। বসে বসে ছবি আঁকছি। এখানকার মাঠের ছবি। উত্তরদিকে বরাবর চলে গেছে রাঙা মাটির রাস্তা,—দক্ষিণ দিকে পোড়ো জমি, উচু নিচু ঢেউ খেলানো, মাঝে মাঝে ঝাঁকড়া বুনো খেজুর। দূরে দুটো চারটে তালগাছ আকাশের দিকে কাঙালের মতো তাকিয়ে। তারি পিছনে জমে উঠেছে ঘন মেঘ, যেন একটা প্রকাণ্ড নীল বাঘ ওৎ পেতে আছে, কখন্‌ একলাফে মাঝ আকাশে উঠে সূর্য্যটাকে দেবে থাবার ঘা। বাটিতে রং গুলে’ তুলি বাগিয়ে এই সব এঁকে চলেছি।

 দরজায় পড়ল ঠেলা। খুলে দেখি ডাকাত নয়, দৈত্য নয়, কোটালের পুত্তুর নয়—সেই লোকটা। সর্ব্বাঙ্গ বেয়ে জল ঝরছে, ময়লা ভিজে জামা