কীসের তর্ক।
শুক বল্ছে, আমি এবার উড়ব, সারী বলছে কোথায় উড়বে।শুক বলছে যেখানে কোথাও ব’লে কিছুই নেই, কেবল ওড়াই আছে। তুমিও চলো আমার সঙ্গে।—সারী বললে আমি ভালোবাসি এই বনকে, এখানে ডালে জড়িয়ে উঠেছে ঝুম্কো লতা; এখানে ফল আছে বটের, এখানে শিমুলের ফুল যখন ফোটে তখন কাকের সঙ্গে ঝগড়া ক’রে ভালো লাগে তার মধু খেতে। এখানে রাত্তিরে জোনাকিতে ছেয়ে যায় ঐ কামরাঙার ঝোপ, আর বাদলায় বৃষ্টি যখন ঝরতে থাকে তখন দুলতে থাকে নারকেলের ডাল ঝরঝর শব্দ ক’রে। আর তোমার আকাশে কীই বা আছে।শুক বললে, আমার আকাশে আছে সকাল, আছে সন্ধ্যে, আছে মাঝরাত্রের তারা, আছে দক্ষিণে হাওয়ার যাওয়া আসা, আর আছে কিছুই না, কিছুই না, কিছুই না।
সুকুমার জিগেস করলে, কিছুই না থাকে কী ক’রে দাদু।
সেই কথাই তো এইমাত্র সারী জিগেস করলে শুককে।
শুক কী বলছে।
শুক বলছে, আকাশের সব চেয়ে অমূল্যধন ঐ কিছুই-না। ঐ কিছুই-না আমাকে ডাক দেয় ভোরের বেলায়। ওরি জন্যে আমার মন কেমন করে যখন বনের মধ্যে বাসা বাঁধি। ঐ কিছুই-না কেবল খেলা করে রঙের খেলা নীল আঙিনায়—মাঘের শেষে আমের বোলের নিমন্ত্রণ চিঠিগুলি ঐ কিছুই-না-র ওড়না বেয়ে হুহু ক’রে উড়ে আসে, মৌমাছিরা খবর পেয়ে চঞ্চল হয়ে ওঠে।
উৎসাহে সুকুমার লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে উঠল, বললে, আমার পক্ষীরাজকে ঐ কিছুই না-র রাস্তা দিয়েই তো চালাতে হবে।
নিশ্চয়ই। পুপুদিদির হরণব্যাপারটা আগাগোড়াই ঐ কিছুই-না-র তেপান্তরে।
১০৪