পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

নামিয়ে আনত। তাদের ঝিঁঝিঁ ঝিঁঝিঁ শব্দে চাঁদনি-চকে ঝিমিয়ে পড়ত চাঁদের পাহারাওয়ালা। সমস্ত রাস্তায় বায়না দিয়ে রেখেছিলুম জোনাকির আলোধারীর দলকে। বাঁশতলার বাঁকা গলি দিয়ে তোমাকে নিয়ে চলত, খস্‌খস্ শব্দ করত ঝরে-পড়া শুকনো পাতাগুলো। ঝর ঝর করতে থাকত নারকেলের ডাল। গন্ধে-ভুরভুর শর্ষে ক্ষেতের আল বেয়ে যখন এসে পড়তে তিরপুর্ণির ঘাটে, তখন ধামাভরা বিন্নিধানের খই নিয়ে ডাক দিতুম গঙ্গামায়ের শুঁড়তোলা মকরকে, তোমাকে চড়িয়ে দিতেম তার পিঠে। ডাইনে বাঁয়ে তার ল্যাজের ঠেলায় জল উঠত কল-কলিয়ে। তিন পহর রাতে শেয়ালগুলো ডাঙায় দাঁড়িয়ে জিগেস করত, ক্যা হুয়া, ক্যা হুয়া। আমি বলতুম, চুপ রও, কুছ নেই হুয়া। এই যাত্রাপথে প্যাঁচা আর বাদুড়ের সঙ্গেও কিছু আপোসে বন্দোবস্তের কথা ছিল। তাদের কাজে লাগাতুম। ভোর সাড়ে চারটের সময় শুকতারা মেমে পড়ত পশ্চিম আকাশে, পূর্ব্ব আকাশে আলোর রেখায় দেখা দিত সকালবেলার তর্জ্জনীতে সোনার আঙুটি থেকে ঠিক্‌রে-পড়া সঙ্কেত। সদ্য জেগে-ওঠা কাক তেঁতুলের ডালে বসে অস্থির হয়ে প্রশ্ন করত, কা-কা। আমি যেমনি বলতুম কিচ্ছু না, অমনি দেখতে দেখতে সব যেত মিলিয়ে।—তুমি জেগে উঠতে তোমার বিছানায়।

 পুপুদিদি একটুখানি হেসে বললে, এই যে আমার ছেলেমানুষীর কাহিনীটি শোনা গেল—এটি এত ইনিয়ে বিনিয়ে ব’লে তোমার কী আনন্দ হোলো। আমার হিংসুকে স্বভাব ছিল এইটে জানাবার জন্যে তোমার এতই উৎসাহ। আর আমাদের বিলিতি আমড়াগাছের পাকা আমড়াগুলো পেড়ে নিয়ে সুকুমারদাকে লুকিয়ে দিয়ে আসতুম, আমড়া সে ভালোবাসত ব’লে; চুরির অপবাদটা হোত আমার আর ভোগ করত সে—সে কথাটা চেপে

১০৬