পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 বিচলিত হবার কী কারণ।

 তুমি থাকতে দোসরা কারণের দরকার নেই। খবর পাওয়া গেল তোমার চেলা কংসারি মুন্সী, যার মুখ দেখলে অযাত্রা, তোমার ছাদে বসে একখানা রামশিঙে তুলে ধরে ফুঁক দিচ্চে, আর গাঁজার লোভ দেখিয়ে জড়ো করেছ যত ফাটা-গলার ফৌজ, তারা প্রাণপণে চেঁচানি অভ্যেস করছে। ভদ্রলোকেরা বলছে, হয় তারা ছাড়বে পাড়া, নয় তোমাকে ছাড়াবে।

 মহা উৎসাহে লাফ দিয়ে উঠে সে চীৎকারস্বরে বললে, প্রমাণ হয়েছে।

 কিসের প্রমাণ।

 বেসুরের দুঃসহ জোর একেবাবে ডাইনামাইট। বদসুরের ভিতর থেকে ছাড়া পেয়েছে দুর্জ্জয় বেগ, উড়ে গিয়েছে পাড়ার ঘুম, দৌড় দিয়েছে পাড়ার শাস্তি, পালাই পালাই রব উঠেছে চারদিকে। প্রচণ্ড আসুরিক শক্তি। এর ধাক্কা একদিন টের পেয়েছিলেন স্বর্গের ভালো মানুষরা। বসে বসে আধচোখ বুজে অমৃত খাচ্চিলেন। গন্ধর্ব্ব ওস্তাদের তম্বুরা ঘাড়ে অতি নিখুঁৎস্বরে তান লাগাচ্ছিলেন পরজবসন্তে, আর নূপুরঝঙ্কারিণী অপ্সরীরা নিপুণতালে তেহাই দিয়ে নৃত্য জমিয়েছিলেন। এদিকে মৃত্যুবরণ নীলঅন্ধকারে তিন যুগ ধ’রে অসুরের দল রসাতল কোঠায় তিমি মাছের লেজের ঝাপটার বে-লয়ে বেসুর সাধনা করছিল। অবশেষে একদিন শনিতে কলিতে মিলে’ দিলে সিগ্নাল, এসে পড়ল বেসুর সঙ্গতের কালাপাহাড়ের দল সুরওয়ালাদের শমে-নাড়া-দেওয় ঘাড়ে, হুঙ্কার ক্রেঙ্কার ঝন্‌ঝন্‌কার ধ্রুম্‌কার দুড়ুমকার গড়গড়গড়ৎকার শব্দে। তীব্র বেসুরের তেলেবেগুনি জ্বলনে পিতামহ পিতামহ ডাক ছেড়ে তাঁরা লুকোলেন ব্রহ্মাণীর অন্দরমহলে। তোমাকে বলব কী অরি, তোমার তো জানা আছে সকল শাস্ত্রই।

 জানা যে নেই আজ তা বোঝা গেল তোমার কথা শুনে।

 দাদা, তোমাদের বই-পড়া বিদ্যে, আসল খবর কানে পৌঁছয় না।

১১১