পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

বাবা ঢেঁকি, শুনে রাখো ভাবীলোকের বিশ্ব-বেসুরের আদিমন্ত্র, যথাকালে ঘর ভাঙাবার কাজে লাগবে। ক্ষুব্ধ ব্রহ্মার চার গলার ঐক্যতান আওয়াজের সঙ্গে যোগ দিলে দিঙনাগেরা শুঁড় তুলে, শব্দের ধাক্কায় দিগঙ্গনাদের বেণীবন্ধ খুলে গিয়ে আকাশ আগাগোড়া ঠাসা হয়ে গেল এলোচুলে—বোধ হোলো কালো পালতোলা ব্যোমতরী ছুটল কালপুরুষের শ্মশান ঘাটে।

 হাজার হোক্‌ সৃষ্টিকর্তা পুরুষ তো বটে।

 পৌরুষ চাপা রইল না। তাঁর পিছনের দাড়িওয়ালা দুই মুখের চার নাসাফলক উঠল ফুলে, হাঁপিয়ে-ওঠা বিরাট হাপরের মতো। চার নাসারন্ধ্র থেকে এক সঙ্গে ঝড় ছুটল আকাশের চারদিককে তাড়না করে। ব্রহ্মাণ্ডে সেই প্রথম ছাড়া পেল দুর্জয় শক্তিমান বেসুর প্রবাহ-গোঁ গোঁ গাঁ গাঁ হুড়মুড় দুর্দ্দাড় গড়গড় ঘড়ঘড় ঘড়াঙ্‌। গন্ধর্বেরা কাঁধে তম্বুরা নিয়ে দলে দলে দৌড় দিল ইন্দ্রলোকের খিড়কির আঙিনায়, যেখানে শচীদেবী স্নানান্তে মন্দার কুঞ্জচ্ছায়ায় পারিজাত কেশরের ধূপধূমে চুল শুকোতে যান। ধরণীদেবী ভয়ে কম্পান্বিতা, ইষ্টমন্ত্র জপতে জপতে ভাবতে লাগলেন ভুল করেছি বা। সেই বেসুরো ঝড়ের উল্টোপাল্টা ধাক্কায় কামানের মুখের তপ্তগোলার মতো ধক্‌ধক্‌শব্দে বেরিয়ে পড়তে লাগল পুরুষ।—কী দাদা, চুপচাপ যে। কথাগুলো মনে লাগছে তো।

 লাগছে বই কি। একেবারে দুমদাম শব্দে লাগছে।

 সৃষ্টির সর্বপ্রধান পৰ্বে বেসুরেরই রাজত্ব—একথাটা বুঝতে পেরেছ তো।

 বুঝিয়ে দাও না।

 তরল জলের কোমল একাধিপত্যকে ঢুঁ মেরে গুঁতো মেরে লাথি মেরে কিল মেরে ঘুষো মেরে ধাক্কা মেরে উঠে পড়তে লাগল ডাঙা, তার পাথুরে নেড়ামুণ্ডুগুলো তুলে। ভূলোকের ইতিহাসে এইটেকেই সব চেয়ে বড়ো পর্ব্ব ব’লে মানো কি না।

১১৬