পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

চন্দ্রবিন্দুবর্ষণ করে বটে তবু বেসুরো অনুনাসিকে সে ডাঙার সম্মান রক্ষা করতে ভোলে না। আর গজরাজ— তাঁর কথা বলাই বাহুল্য। পশুপতির কাছে দীক্ষাপ্রাপ্ত এই সমস্ত স্থলচর জীবের মধ্যে কি একটাও কোকিলকণ্ঠ বের করতে পারো। ঐ যে তোমার বুলডগ্‌ ফ্রেডি চীৎকারে ঘুমছাড়া করে পাড়া, ওর গলায় দয়া ক’রে বা মজা ক’রে বিধাতা যদি দেন শ্যামা দোয়েলের শিষ, ও তাহোলে নিজের মধুর কণ্ঠের অসহ্য ধিক্কারে তোমার চল্‌তি মোটরের তলায় গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে এ আমি বাজি রাখতে পারি। আচ্ছা সত্যি ক’রে বলো, কালীঘাটের পাঁঠা যদি কর্কশ ভ্যাভ্যা না করে রামকেলি ভাজতে থাকে তাহোলে তুমি তাকে জগন্মাতার পবিত্র মন্দির থেকে দূর দূর ক’রে খেদিয়ে দেবে না কি।

 নিশ্চয় দেব।

 তাহোলে বুঝতে পারছ, আমরা যে সুমহৎ ব্রত নিয়েছি তার সার্থকতা। আমরা শক্ত ডাঙার শাক্ত সন্তান, বেসুরমন্ত্রে দীক্ষিত। আধমরা দেশের চিকিৎসায় প্রয়োগ করতে চাই চরম মুষ্টিযোগ। জাগরণ চাই, বল চাই। জাগরণ শুরু হয়েছে পাড়ায়, প্রতিবেশীদের বলিষ্ঠতা দুমদাম শব্দে দুর্দ্দাম হচ্চে, পৃষ্ঠদেশে তার প্রমাণ পাচ্ছে আমার চেলারা। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কোতোয়ালরা চঞ্চল হয়ে উঠেছে, টনক নড়েছে শাসনকুর্ত্তাদের।

 তোমার গুরু বলছেন কী।

 তিনি মহানন্দে মগ্ন। দিব্যচক্ষে দেখতে পাচ্ছেন বেসুরের নবযুগ এসেছে সমস্ত জগতে। সভ্যজাতরা আজ বলছে বেসুরটাতেই বাস্তব, ওতেই পুঞ্জীভূত পৌরুষ, সুরের মেয়েমানুষিই দুর্ব্বল করেছে সভ্যতা। ওদের শাসনকর্ত্তা বলছে জোর চাই, খৃষ্টানি চাইনে। রাষ্ট্রবিধিতে বেসুর চড়ে যাচ্চে পর্দায় পর্দায়। সেটা কি তোমার চোখে পড়েনি দাদা।

 চোখে পড়বার দরকার কী ভাই। পিঠে পড়ছে দমাদ্দম।

১১৯