পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 এদিকে বেতালপঞ্চবিংশতিই চাপল সাহিত্যের ঘাড়ে। আনন্দ করো—বাংলাও ওদের পাছু ধরেছে।

 সে তো দেখছি।—পাছু ধরতে বাংলা কোনোদিন পিছপাও নয়।

 এদিকে গুরুর আদেশে বেসুর মন্ত্র সাধন করবার জন্যে আমরা হৈ হৈ সঙ্ঘ স্থাপন করেছি। দলে একজন কবি জুটেছে। তার চেহারা দেখে আশা হয়েছিল নব যুগ মূর্ত্তিমান। রচনা দেখে ভুল ভাঙল— দেখি তোমারি চেলা। হাজারবার ক’রে বলছি, ছন্দের মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলো গদাঘাতে, বলছি, অর্থমনর্থং ভাবয়নিত্যং, বুঝিয়ে দিলেম, কথার মানেটাকে সম্মান করায় কেবল দাসবুদ্ধির গাঠপড়া মনটাই ধরা পড়ে; ফল হচ্ছে না। বেচারার দোষ নেই— গলদঘর্ম হয়ে ওঠে তবু ভদ্রলোকী কাব্যের ছাদ ঘোচাতে পারে না। ওকে রেখেছি পরীক্ষাধীনে। প্রথম নমুনা যেটা সমিতির কাছে দাখিল করেছে সেটা শুনিয়ে দিই। সুর দিয়ে শোনাতে পারব না।

 সেই জন্যেই তোমাকে ঘরে ঢুকতে দিতে সাহস হয়। তবে অবধান করো:—

পায়ে পড়ি শােনো ভাই গাইয়ে।
হৈ হৈ পাড়া ছেড়ে দূর দিয়ে যাইয়ে।
হেথা সারে গামা পায়ে সুরাসুরে যুদ্ধ,
শুদ্ধ কোমলগুলো বেবাক অশুদ্ধ—
অভেদ রাগিণীরাগে ভগিনী ও ভাইয়ে।
তার-ছেঁড়া তম্বুরা তালকাটা বাজিয়ে
দিনরাত বেধে যায় কাজিয়ে।
ঝাঁপতালে দাদ্‌রায় চৌতালে ধামারে
এলােমেলো ঘা মারে—
তেরে কেটে মেরে কেটে ধাঁ ধাঁ ধাঁ ধাঁ ধাইয়ে।

 সভাসুদ্ধ একবাক্যে ব’লে উঠলুম, এ চলবে না। এখনো জাতের মায়া

১২০