পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

উচুনিচু ডাঙায় ঝাপ্সা দেখাচ্চে দলবাঁধা গাছ। সমস্তটার পিছনে খোলা আকাশ, সেই আকাশে একটা সুদূরতা,—মনে হচ্চে যেন অনেক দূরের ওপার থেকে একটা ঘণ্টার ধ্বনি ক্ষীণতম হয়ে গেছে বাতাসে, যেন রোদ্দুরে মিশিয়ে দিয়েছে তার কথাটাকে—বেলা যায়—।

 তোমার মুখ দেখে স্পষ্ট বোঝা গেল একখানা গাছ হওয়ার চেয়ে নদী বন আকাশ নিয়ে একখানা সমগ্র ভূদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কল্পনা তোমার কাছে অনেক বেশি সৃষ্টিছাড়া বোধ হোলো।

 সুকুমার বললে, গাছপালা নদী সবটার উপরে তুমি ছড়িয়ে মিলিয়ে গেছ মনে করতে আমার ভারি মজা লাগছে। আচ্ছা, সত্যযুগ কি কোনোদিন আসবে।

 যতদিন না আসে ততদিন ছবি আছে কবিতা আছে। আপনাকে ভুলে গিয়ে আর কিছু হয়ে যাবার ঐ একটা বড়ো রাস্তা!

 সুকুমার বললে, তুমি যেটা বললে ওটা কি ছবিতে এঁকেছ।

 হাঁ এঁকেছি।

 আমিও একটা আঁকব।

 সুকুমারের স্পর্দ্ধার কথা শুনে তুমি ব’লে উঠলে, পারবে না কি তুমি আঁকতে।

 আমি বললুম, ঠিক পারবে। আঁকা হয়ে গেলে ভাই তোমারটা আমি নেব আমারটা তোমাকে দেব।

 সেদিন এই পর্য্যন্ত হোলে। আমাদের আলাপ।

 এইবার আমাদের সেদিনকার আসরের শেষ কথাটা ব’লে নিই। তুমি চলে গেলে তোমার পায়রাকে ধান খাওয়াতে। সুকুমার তখনো বসে বসে কী ভাবতে লাগল। আমি তাকে বললুম, তুমি কী ভাবছ বলব।

 সুকুমার বললে, বলো দেখি।

১৪৪