পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

পুপেদিদির সেদিনকার হাসি যদি ফিরিয়ে নিতে পারেন তো ভালোই, নইলে যেন ছিড়ে ফেলেন। আমার এবারকার যাত্রায় চন্দ্রলোকের মাঝপথেই পক্ষীরাজের পাখা ভাঙা অসম্ভব নয়। যদি ভাঙে তবে এক নিমেষে সত্যলোকে পৌঁছব—সূর্য্য প্রদক্ষিণের পথে একেবারে মিলে যাব পৃথিবীর সঙ্গে। যদি বেঁচে থাকি, আকাশের খেয়া-পারাপারে যদি নৈপুণ্য ঘটে তাহোলে একদিন পুপুদিদিকে নিয়ে শূন্য পথে পাড়ি দিয়ে আসব মনে এই ইচ্ছে রইল। সত্যযুগে বোধ হয় ইচ্ছে আর ঘটনা একই ছিল। চেষ্টা করব ধ্যানযোগে ইচ্ছেকেই ঘটনা ব’লে ধরে নিতে। ছেলেবেলা থেকে অকারণে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকাই আমার অভ্যাস। ঐ আকাশটা পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ যুগের কোটি কোটি ইচ্ছে দিয়ে পূর্ণ। এই বিলীয়মান ইচ্ছেগুলো বিশ্বসৃষ্টির কোন্ কাজে লাগে কী জানি। বেড়াক্ উড়ে আমার দীর্ঘনিঃশ্বাসে উৎসারিত ইচ্ছেগুলো সেই আকাশেই, যে আকাশে তাজ আমি উড়তে চলেছি।

 পুপুদিদি ব্যাকুল হয়ে উঠে জিগেস কর্লে, সুকুমারদার এখনকার খবর কী।

 আমি বললুম, সেইটেই পাওয়া যাচ্চে না ব’লেই তার বাবা বিলেতে সন্ধান করতে চলেছেন।

 বিবর্ণ হয়ে গেল দিদির মুখ। আস্তে আস্তে উঠে ঘরে দরজা বন্ধ করে দিলে।

 আমি জানি সুকুমারের আঁকা সেই ছেলেমান্থষি পুপুদিদি আপন ডেস্কে লুকিয়ে রেখেছে।

 আমি চষমাটা মুছে ফেলে চলে গেলুম সুকুমারদের বাড়ির ছাদে। সেই ভাঙা ছাতাটা সেখানে নেই, নেই সেই আতসবাজির আধপোড়আ কাঠি।


১৪৮