পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 দেবভাষা সংস্কৃত-কিম্ভূত শব্দের এক পর্য্যায়।

 যদ্ভুত তদ্ভূত মানেটা কী হোলো?

 ওর মানে, যা খুসি তাই। ওটা বঙ্গভাষায়—যাকে হাল আমলের পণ্ডিতেরা বলেছে, “অবদান।”

 লোকটার ’পরে আমার ভক্তি কূল ছাপিয়ে উঠল। মনে হোলো অসাধারণ প্রতিভা। ওর পিঠ থাবড়িয়ে বললুম, স্তম্ভিত করেছ আমাকে।

 সে বললে, স্তম্ভিত হোলে চলবে কেন? চলতে হবে। লগ্ন বয়ে যাচ্চে। ফস্ ক’রে ববকরণ পেরিয়ে যাবে কখন্‌, এসে পড়বে তৈতিলকরণ, বৈষ্কুম্ভ যোগ, তার পরেই হর্ষণ যোগ, বিষ্টিকরণ, শেষ রাত্তিরে অসৃক যোগ, ধনিষ্ঠানক্ষত্র—গোস্বামীমতে ব্যতীপাতযোগ বালবকরণ, পরিঘযোগে যখন গরকরণ এসে পড়বে তখন বিপদ হবে-ঘরকরণার পক্ষে গরকরণের মতো এত বড়ো বাধা আর নেই। সিদ্ধিযোগ ব্রহ্মযোগ ইন্দ্রযোগ শিবযোগ এই হপ্তার মধ্যে একদিনো পাওয়া যাবে না, বরীয়ান যোগের অল্প একটু আশা আছে যখন পুনর্ব্বসু নক্ষত্রের দৃষ্টি পড়বে।

 কাজ নেই, কাজ নেই এখখনি বেরিয়ে পড়া যাক্। ডাক দাও পুত্তুলালকে মোটরখানা আনুক। সে এতক্ষণে চরকা কাটতে বসেছে। চরকা কাটতে কাটতে তবে সে ঘুমতে পারে, মোটর চালিয়ে চালিয়ে তার এই দশা হয়েছে।

 গাড়িতে চড়ে বসলুম।

 জঙ্গলের মধ্য দিয়ে চলেছি, ঘোর অন্ধকার। পুকুরের ধারে আসসেওড়ার ঝোপ। হঠাৎ তার ভিতর থেকে খেঁকশিয়ালী উঠল ডেকে। তখন রাত সাড়ে তিনটে হবে। যেমনি ডাকা, পুত্তুলাল চমকে উঠে গাড়িসুদ্ধ গিয়ে পড়ল একগলা জলের মধ্যে। এদিকে তার পিঠের কাপড়ের ভিতরে একটা ব্যাঙ ঢুকে লাফালাফি করছে। আর পুতুলালের সে কী চেঁচানি! আমি

৩৪