পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

মঙ্গলবারের আগের মঙ্গলবারে ফাটা ফুটবল্‌ ভর্ত্তি ক’রে সমস্তটা পাঠিয়ে দিয়েছি বুজুদিদির ওখানে—সে ওটা খেতে ভালোবাসে ছোলার ছাতুর সঙ্গে শর্ষে তেল আর লঙ্কা দিয়ে মেখে।

 মুখ শুকিয়ে গেল, বললুম, আমরা খাই কী।

 বৌদিদি বললে, শুক্‌নো কুচো চিংড়িমাছের মোরব্বা আছে টাট্‌কা চিটেগুড়ে জমানো। বাছার খেয়ে নাও, নইলে পিত্তি পড়ে যাবে।

 কিছু খেলেম, অনেকটাই রইল বাকি। পুত্তুলালকে জিগেস করলুম, খাবি? সে বললে ভাঁড়টা দাও, বাড়ি গিয়ে আহ্নিক ক’রে খাব। বাড়ি এলেম ফিরে। চটিজুতো ভিজে, গা-ময় কাদা।

 বনমালীকে ডাক দিয়ে বললুম, বাঁদর, কী করছিলি।

 সে হাউহাউ ক’রে কাঁদতে কাঁদতে বললে, বিছে কামড়েছিল, তাই ঘুমচ্ছিলুম।—ব’লেই সে চলে গেল ঘুমতে।

 এমন সময় একটা গুণ্ডাগোছের মানুষ একেবারে ঘরের মধ্যে উপস্থিত। মস্ত লম্বা, ঘাড় মোটা, মোটা পিপের মতো গর্দ্দান, বনমালীর মতো রং কালো, ঝাঁকড়া চুল, খোঁচা খোঁচা গোঁফ, চোখ দুটো রাঙা, গায়ে ছিটের মেরজাই, কোমরে লালরঙের ডোরাকাটা লুঙির উপর হল্‌দে রঙের তিন-কোণা গামছা বঁধা, হাতে পিতলের কাঁটামারা লম্বা একটা বাঁশের লাঠি, গলার আওয়াজ যেন গদাইবাবুদের মোটর গাড়িটার শিঙের মতো। হঠাৎ সে সাড়ে তিন মোণ ওজনের গলায় ডেকে উঠল—“বাবুমশায়।”

 চমকে উঠে কলমের খোঁচায় খানিকটা কাগজ ছিঁড়ে গেল।

 বললুম, কী হয়েছে, কে তুমি।

 সে বললে, আমার নাম পাল্লারাম, দিদির বাড়ি থেকে এসেছি, জানতে চাই তোমাদের ‘সে’ কোথায় গেল।

 আমি বললুম-আমি কী জানি।

৩৭