পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 পাল্লারাম চোখ পাকিয়ে হাঁক দিয়ে বললে, জানো না বটে! ঐ যে তার তালি-দেওয়া আঁশ-বের-করা সবুজ রঙের একপাটি পশমের মোজা কাদাসুদ্ধ শুকিয়ে গিয়ে মরা কাঠবেড়ালীর কাটা লেজের মতো তোমার বইয়ের শেলফে ঝুলছে ওটা ফেলে সে যাবে কোন্ প্রাণে।

 আমি বললুম, লোকসান সইবে না, যেখানে থাকে ফিরে আসবেই। কিন্তু হয়েছে কী।

 পাল্লারাম বলে, পর্শুদিন সন্ধ্যের সময় দিদি গিয়েছিল জঙ্গিলাটের বাড়ি-লাটগিন্নির সঙ্গে গঙ্গাজল পাতিয়েছে।—ফিরে এসে দেখে, একটা ঘটি একটা ছাতা, একজোড়া তাস, হারিকেন লণ্ঠন, আর একটা পাথুরে কয়লার ছালা নিয়ে কোথায় “সে” চ’লে গেছে; দিদি বাগান থেকে একঝুড়ি বাঁশের কোঁড়া, লাউডগা আর বেতোশাক তুলে রেখেছিল তাও খুঁজে পাওয়া যাচ্চে। দিদি ভারি রাগ করছে।

 আমি বললুম- আমি কী করব!

 পাল্লারাম বললে, তোমার এখানে কোথায় সে লুকিয়ে আছে, তাকে বের ক’রে দাও।

 আমি বললুম, এখানে নেই, তুমি থানায় খবর দাও গে।

 নিশ্চয় আছে।

 আমি বললুম, ভালো মুস্কিলে ফেললে দেখছি—বলছি সে নেই।

 নিশ্চয় আছে, নিশ্চয় আছে, নিশ্চয় আছে।বলতে বলতে পাল্লারাম আমার টেবিলের উপর দমাদ্দম তার বাঁশের লাঠির মুণ্ডটা ঠুকতে লাগল। পাশের বাড়িতে একটা পাগল ছিল সে শেয়াল ডাকের নকল ক’রে হাঁক দিল হুক্কাহুয়া। পাড়ার সব কুকুর চেঁচিয়ে উঠল। বনমালী আমার জন্যে একগ্লাস বেলের সরবৎ রেখে গিয়েছিল সেটা উল্‌টিয়ে বোতল ভেঙে বেগ্‌নি রঙের কালীর সঙ্গে মিশে রেশমের চাদর বেয়ে আমার জুতোর মধ্যে গিয়ে

৩৮