পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 সার্কাস দেখে আসার পর থেকে পুপুদিদির মনটা যেন বাঘের বাসা হয়ে উঠল। বাঘের সঙ্গে বাঘেব মাসিব সঙ্গে সর্ব্বদা তার আলাপ চলছে। আমরা কেউ যখন থাকিনে তখনি ওদের মজলিস জমে। আমার কাছে নাপিতের খবর নিচ্ছিল—আমি বললুম, নাপিতের কী দরকার। পুপু জানালে, বাঘ ওকে অত্যন্ত ধরে পড়েছে; খোঁচা খোঁচা হয়ে উঠেছে ওর গোঁফ, ও কামাতে চায়।

 আমি জিগেস করলেম, গোঁফ কামানোর কথা ওর মনে এল কী ক’রে।

 পুপু বললে, চা খেয়ে বাবার পেয়ালায় তলানি যেটুকু বাকি থাকে আমি বাঘকে খেতে দিই। সেদিন তাই খেতে এসে ও দেখতে পেয়েছিল পাঁচু বাবুকে; ওর বিশ্বাস, গোঁফ কামালে ওর মুখখানা দেখাবে ঠিক পাঁচু বাবুরই মতো।

 আমি বললুম, সেটা নিতান্ত অন্যায় ভাবেনি। কিন্তু একটু মুস্কিল আছে। কামানোর সুরুতেই নাপিতকে যদি শেষ করে দেয় তাহোলে কামানো শেষ হবেই না।

 শুনেই ফস্ করে পুপের মাথায় বুদ্ধি এল, ব’লে ফেললে, জানো দাদামশায়, বাঘরা কখ্‌খনো নাপিতকে খায় না।

 আমি বললুম, বলো কী। কেন বলো দেখি।

 খেলে ওদের পাপ হয়।

 ওঃ তাহোলে কোনো ভয় নেই। এক কাজ করা যাবে, চৌরঙ্গীতে সাহেব-নাপিতের দোকানে নিয়ে যাওয়া যাবে।

 পুপে হাততালি দিয়ে বলে উঠল, হাঁ হাঁ ভারি মজা হবে। সাহেবের মাংস নিশ্চয় খাবে না, ঘেন্না করবে।

৫১