পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 বিলেতে।

 না।

 তুমি যে বলছিলে, অণ্ডামানে যাওয়া ওর একরকম ঠিক হয়ে আছে। গেল না কি।

 দরকার হোলা না।

 তা হোলে কী হোলো আমাকে বলছ না কেন।

 ভয় পাবে কিম্বা দুঃখ পাবে তাই বলিনে।

 তা হোক বলতে হবে।

 আচ্ছা তবে শোনো। সেদিন ক্লাস পড়াবার খাতিরে আমার পড়ে নেবার কথা ছিল ‘বিদগ্ধমুখমণ্ডন’। একসময় হঠাৎ দেখি, সেটা রয়েছে পড়ে, হাতে উঠে এসেছে “পাঁচুপাড়াশির পিস্‌শাশুড়ি”। পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছিলুম, রাত হবে তখন আড়াইটা। স্বপ্ন দেখছি, গরম তেল জ্বলে উঠে আমাদের কিনি বামনীর মুখ বেবাক্ গিয়েছে পুড়ে, সাত দিন সাত রাত্তির হত্যে দিয়ে তারকেশ্বরের প্রসাদ পেয়েছে দু’কৌটো লাহিড়ি কোম্পানীর মূনলাইট স্নো, তাই মাখছে মুখে ঘষে ঘষে। আমি বুঝিয়ে বললুম, ওতে হবে না গো, মোষের বাচ্ছার গালের চামড়া কেটে নিয়ে মুখে জুড়তে হবে নইলে রঙে মিলবে না। শুনেই আমার কাছে শওয়া তিনটাকা ধার নিয়ে সে ধর্ম্মতলার বাজারে মোষ কিনতে দৌড়েছে।

 এমন সময় ঘরে একটা কী শব্দ শোনা গেল, কে যেন হাওয়ার তৈরি চটিজুতো হুস হুস ক’রে টানতে টানতে ঘরময় ঘুরে বেড়াচ্চে। ধড়ফড় ক’রে উঠলেম, উস্কে দিলেম লণ্ঠনটা। ঘরে একটা কিছু এসেছে দেখা গেল কিন্তু সে যে কে, সে যে কী, সে যে কেমন, বোঝা গেল না। বুক ধড়ফড় করছে তবু, জোর গলা ক’রে হেঁকে বললুম, কে হে তুমি, পুলিস ডাক্‌ব না কি।

৬৭