পাতা:সোক্রাটীস (দ্বিতীয় খণ্ড) - রজনীকান্ত গুহ.pdf/৪১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২শ অধ্যায় ] বিচার ও মৃত্যু VSv করিয়া রাখিল । তাহার সমগ্ৰজীবনব্যাপী সাধনার মহত্তম পরিণাম তঁহার নিঃশঙ্ক দেহত্যাগ ; তিনি ইহলোক হইতে প্ৰস্থান করিবার কালে যে প্ৰসন্ন, প্ৰশান্ত ও আনন্দময় ভাবে প্ৰদৰ্শন করিলেন, তাহ প্ৰতিপন্ন করিল, যে তিনি যাহা সত্য বলিয়া গ্ৰহণ করিয়াছিলেন, তাহা ক্ষণিক ভাবুকতা নয়, অসার ভ্রান্তিবিজুম্ভণ নয়, অলীক কবিকল্পনা নয় ; তাহ নিৰ্ম্মল জ্ঞানের অটল ভিত্তিতে প্ৰতিষ্ঠিত। তিনি যাহা শিক্ষণ দিয়াছিলেন, মৃত্যু যে তাহার অর্থ ও সারবত্ত বৰ্দ্ধিত কবিল, তাহা নহে ; কিন্তু উহাতে তাহার প্রভাব বিপুল ও দূবব্যাপী হইল। “সত্যের জন্য ছাড়িতে পারি। না, এমন সুখ নাই ; সহিতে পাবি না, এমন দুঃখ নাই ; করিতে পারি না, এমন কঠিন কৰ্ম্ম নাই”-তাহার জীবনের এই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হইয়া কত কত জ্ঞানযোগী সত্যকেই পরামধন্যরূপে বরণ করিয়া সত্যনির্ণয়ে ও সত্য প্রচারে জীবন উৎসর্গ করিয়াছেন। প্ৰবাদ আছে, ফিনিক্ষ নামক পক্ষী অগ্নিকুণ্ডে দগ্ধ হইয়া চিতাভস্ম হইতে নব কায়া লইয়া আবিৰ্ভত হয় ; ঠিক তেমনি সোক্ৰোটস মরিয়াও মরিলেন না ; দেহধারী সোক্রেটাস যেখানে শক্রহস্তে নিহত হইলেন, অশরীবা সোত্ৰাটীস সেখানে মুষ্টিমেয় ভক্তমণ্ডলীর প্রাণে মূৰ্ত্ত হইয়৷ যে-ভজ্ঞানধারা প্রবহমান করিলেন, পশ্চিম ভূখণ্ড আজিও তাহার অমৃতবারি পান কবিয়া কৃতকৃতাৰ্থ হইতেছে। যতকাল ধবাতলে মানবজাতি বৰ্ত্তমান থাকিবে, ততকাল সোক্রেটসের বিচার ও মৃত্যুর কাহিনী কদাপি বিস্মৃতিসাগরে বিলুপ্ত হইবে না। তিনি প্ৰতীচীতে চিন্তা ও সত্যানুসন্ধানে স্বাধীনতারা প্ৰবৰ্ত্তক ; মানুষ যদি সত্যের সমাদর কবিতে ভুলিয়া না যায়, তবে চিরদিন জ্ঞানচর্চার সুকৌশলী সারথিরূপে তাহাকে কৃতজ্ঞতার অঞ্জলি অৰ্পণ করিবে । যেমন জড় জগতে কেন্দ্ৰাভিাগামিনী ও কেন্দ্ৰাপসারিণী শক্তির সমবায়ে গ্ৰহনক্ষত্ররাজি আপনি আপন কক্ষে পরিভ্রমণ করে, তেমনি গ্ৰহণ ও বর্জন, আহরণ ও নিষ্কাশন, ংরক্ষণপ্ৰিয়তা ও উন্নতিশীলতা, এই দ্বিবিধ বৃত্তির ঘাতপ্ৰতিঘাতে সমাজদেহ রক্ষিত হয়, তাহার স্বাস্থ্য ও বল পরিপুষ্ট লাভ করে। কিন্তু নৈসৰ্গিক নিয়মবশতঃ জড়িত্ব বা স্থিতি প্ৰবণতাই মানবহৃদয়ে অধিকতর