পাতা:সোনার চেয়ে দামী (দ্বিতীয় খণ্ড) - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছিল ? বলে কয়ে নিতে চাইলে এ জগতে কে তাকে দিচ্ছে ঋণ ? কে স্বীকার করছে যে বেকার নিরুপায় তারও যোগ্যতা আছে দাবী আছে ঋণ পাবার ? সরকারের পর্য্যন্ত ঋণ দরকার হয়, সকলের ধন কেড়ে নিয়ে যে কজন হয়েছে কুবেরের মত ধনী, তাদের বসম্বন্দ যে সরকার। সরকার কোটি টাকা ঋণ চাইলে কয়েক ঘণ্টায়। সে টাকা উঠে উঠে যায়। ঋণ দিতে উৎসুক অনেকের টাকা বাতিল করতে হয় । তাকে কে ঋণ দিচ্ছে পাঁচটা টাকা ? কঁাড়ি কঁাড়ি টাকা রাশি রাশি সোনা অকেজো করে যদি ফেলে রাখতে পারে মানুষ, সেও তার চরম প্ৰয়োজনের সময় না বলে তার একটা অতি ক্ষুদ্র অংশ ধার নিতে পারে। সাধনা যখন ভেঙ্গে পড়েছে, সেই সঙ্গে ভেঙ্গে চুরমার করে দেবার উপক্রম করেছে তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবন, আর কোন উপায় না থাকলে এ ভাবে ঋণ গ্রহণের অধিকার তার নিশ্চয় জন্মায় । সাধারণ সুখের লোভে, সাধারণ অভাব অনটনের হাত থেকে রেহাই পেতে সে বিশুর মার গয়নাগুলি নেয় নি । এদিক দিয়ে সে খাটি থেকেছে নিজের কাছে । গয়না ক’টা বেচে দু'হাজারেরও বেশী টাকা পকেটে নিয়ে খিদেয় যখন বিম ঝিম করছিল জগৎ তখনও সে প্রশ্ৰয় দেয় নি একটি চপ খাবার ইচ্ছাকে। ওই দু’হাজার টাকা নয়, পকেটে হাত দিয়ে হিসাব করেছিল নিজের এগারো আনা পয়সার ।