পাতা:সোনার চেয়ে দামী (দ্বিতীয় খণ্ড) - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশা থাকত যে যতই খারাপ হোক বিয়ে, যত সামান্যই।” জুটুক যে জন্য বিয়ে দেওয়া জীবনের সেই সার্থকতা-বাপের বাড়ী আইবুড়ো হয়ে জীবন কাটানোর চেয়ে সে অনেক ভাল । বর বুড়ো হোক, সেদিক থেকে ব্যর্থ হোক মেয়ের জীবন, খেয়ে পরে সংসারে গিন্নি হয়ে দিন কাটাবার সুখটা সে পাবে। অথবা যোয়ান বয়সী অকেজো অপদাৰ্থ হোক বর-তার বাপ দাদা ভাল ঘরের মানুষ, তার স্বামীর দিকটি ছাড়া । অন্যদিকে সুখে রাখাবার চেষ্টা করবে। মেয়েকে । আজ আর এসব ভরসা নেই। ভাল বর ছাড়া কোনদিকে আশা করার কিছু নেই যে বাপের বাড়ী কুমারী হয়ে পড়ে । থাকার দুৰ্দশার চেয়ে বিয়ে দিলে অন্ততঃ সামান্য একটু , ভাল হবে মেয়ের জীবনটা ? প্রভার সঙ্গে কথা কইতে কইতে শোভার উপর বাড়ীর মানুষের নির্ভরতা লক্ষ্য করে। মনে মনে সাধনা সায় দেয় । দশটা ঝি দশটা রাধুনি দশটা দাই-এর মতই তাকে ছাড়া গতি নেই। এ বাড়ীর ছেলে বুড়ো মেয়ে পুরুষের-এর চেয়ে আর কি চরম ব্যৰ্থত কল্পনা করা যায় একটি বিকাশোম্মুখ নারী জীবনের । কিন্তু এর চেয়েও বীভৎস ভয়ানক ব্যর্থতা সহজেই কল্পনা করা সম্ভব হয়েছে এদেশে । গায়ের জোরে ঋষির মস্ত্রের অচ্ছেদ্য বঁধনে চিরকালের জন্য বেঁধে ওকে যে কোন একটা পুরুষের দাসী করে দিলে ওই নতুন তঁাতের শাড়ীটি হয় তো আর ওর গায়ে উঠবে না, মাছের টুকরো না পেলেও ঝোল।