পাতা:সোনার তরী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৭৬
সােনার তরী।

তাহার অগাধ শান্তি, তাহার অপার ব্যাকুলতা,
তার সুগম্ভীর মৌন তার সমুচ্ছল কলকথা,
তার হাস্য, তার অশ্রুরাশি!—কখনো বা আপনারে
রাখিতে পার না যেন, স্নেহপূর্ণ স্ফীত স্তনভারে
উন্মাদিনী ছুটে’ এসে ধরণীরে বক্ষে ধর চাপি’
নির্দয় আবেগে; ধরা প্রচণ্ড পীড়নে উঠে কাঁপি’,
রুদ্ধশ্বাসে উৰ্দ্ধশ্বাসে চীৎকারি’ উঠিতে চাহে কাঁদি’,
উন্মত্ত স্নেহক্ষুধায় রাক্ষসীর মত তারে বাঁধি’
পীড়িয়া নাড়িয়া যেন টুটিয়া ফেলিয়া একেবারে
অসীম অতৃপ্তি মাঝে গ্রাসিতে নাশিতে চাহ তারে
প্রকাণ্ড প্রলয়ে। পরক্ষণে মহা অপরাধীপ্রায়
পড়ে’ থাক তটতলে স্তব্ধ হয়ে বিষন্ন ব্যথায়
নিষণ্ণ নিশ্চল;—ধীরে ধীরে প্রভাত উঠিয়া এসে
শান্তদৃষ্টি চাহে তোমাপানে; সন্ধ্যাসখী ভালবেসে
স্নেহকরস্পর্শ দিয়ে সান্ত্বনা করিয়ে চুপে চুপে
চলে’ যায় তিমির-মন্দিরে; রাত্রি শোনে বন্ধুরূপে
গুমরি’-ক্রন্দন তব রুদ্ধ অনুতাপে ফুলে’ ফুলে’।


আমি পৃথিবীর শিশু বসে’ আছি তব উপকূলে,
শুনিতেছি ধ্বনি তব; ভাবিতেছি, বুঝা যায় যেন
কিছু কিছু মর্ম্ম তার—বোবার ইঙ্গিত-ভাষা হেন
আত্মীয়ের কাছে। মনে হয়, অন্তরের মাঝখানে
নাড়ীতে যে রক্ত বহে সেও যেন ওই ভাষা জানে