পাতা:স্বদেশ ও সাহিত্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিভাষণ বিবরণও নয়, দোষগুণের সমালোচনাও নয়, কিন্তু এরই মধ্যে চিন্তা করার, আলোচনা করার, বাঙ্গলা সাহিত্যের ভবিষ্যৎ দিক-নির্ণয়ের পৰ্য্যাপ্ত উপাদান নিহিত আছে। কবি বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠের’ উল্লেখ করে বলেছেন, "বিষবৃক্ষ’ ও ‘কৃষ্ণকাস্তের উইলের তুলনায় এর সাহিত্যিক মূল্য সামান্তই। এর মূল্য স্বদেশ-হিতৈষণায়,-মাতৃভূমির দুঃখ দুৰ্দ্দশার বিবরণে, তার প্রতীকারের উপায় প্রচারে, তার প্রতি প্রীতি ও ভক্তি আকর্ষণে। অর্থাৎ, ‘আনন্দমঠে সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্রের সিংহাসন জুড়ে’ বসেছে প্রচারক ও শিক্ষক বঙ্কিমচন্দ্র। বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস সম্বন্ধে এমন কথা, বোধকরি এর পূৰ্ব্বে আর কেউ বলতে সাহস করেনি। এবং এ কথাও হয়ত নিঃসংশয়ে বলা চলে যে, কথা-সাহিত্যের ব্যাপারে এই হচ্চে রবীন্দ্রনাথের সুস্পষ্ট ও সুনিশ্চিত অভিমত । এই অভিমত সবাই গ্রাহ করতে পারবে কিনা জানিনে, কিন্তু যারা পারবে, উত্তর কালে তাদের গন্তব্য পথের সন্ধান এইখানে পাওয়া গেল। এবং ধারা পারবে না। তাদেরও একান্ত শ্রদ্ধায় মনে করা ভালো যে, এ উক্তি রবীন্দ্রনাথের—যার সাহিত্যিক প্রতিভা ও instinct প্রায় অপরিমেয় বলা চলে । - গল্প, উপন্যাস ও কবিতায় স্বদেশের দুঃখের কাহিনী, অনাচারঅত্যাচারের কাহিনী কি করে যে লেখকের অন্যান্য রচনা ছায়াচ্ছন্ন করে দেয় আমি নিজেও তা জানি, এবং বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতি সভায় গিয়েও তা অনুভব করে এসেচি। বছর কয়েক পূৰ্ব্বে কাঠালপাড়ায় বঙ্কিম সাহিত্যসভায় একবার উপস্থিত হ’তে পেরেছিলাম। দেখলাম তার মৃত্যুর দিন স্মরণ করে বহু মনীষী, বহু পণ্ডিত, বহু সাহিত্য-রসিক বহুস্থান থেকে সভায় সমাগত হয়েছেন, বক্তার পরে বক্তা—সকলের ১৩৭