পাতা:স্বদেশ ও সাহিত্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্রনাথ এর পরেই সাহিত্যের সঙ্গে হলো আমার ছাড়াছাড়ি। ভুলেই গেলাম যে জীবনে একটা ছত্রও কোনও দিন লিখেচি ; দীর্ঘকাল কাটুলো প্রবাসে,—ইতিমধ্যে কবিকে কেন্দ্র করে কি করে’ যে নবীন বাঙ্গলা সাহিত্য দ্রুতবেগে সমৃদ্ধিতে ভরে উঠলে আমি তার কোনও খবরই জানিনে। কবির সঙ্গে কোনও দিন ঘনিষ্ঠ হবারও সৌভাগ্য ঘটেনি, তার কাছে বসে সাহিত্যের শিক্ষা গ্রহণেরও স্বযোগ পাইনি, আমি ছিলাম একেবারেই বিচ্ছিন্ন। এইটা হলো বাইরের সত্য, কিন্তু, অন্তরের সত্য সম্পূর্ণ বিপরীত। সেই বিদেশে আমার সঙ্গে ছিল কবির খানকয়েক বই—কাব্য ও কথা-সাহিত্য এবং মনের মধ্যে ছিল পরম শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস । তখন ঘুরে ঘুরে ঐ ক’খানা বই-ই বার বার করে’ পড়েছি,—কি তার ছন্দ, কটা তার অক্ষর, কাকে বলে art, কি তার সংজ্ঞা, ওজন মিলিয়ে কোথাও কোনও ক্রটি ঘটেছে কিনা—এসব বড় কথা কখনো চিন্তাও করিনি--gসব ছিল আমার কাছে বাহুল্য। শুধু সুদৃঢ় প্রত্যয়ের আকারে মনের মধ্যে এইটুকু ছিল যে, এর চেয়ে পূর্ণতর স্বষ্টি আর কিছু হতেই পারে না। কি কাব্যে, কি কথা-সাহিত্যে আমার ছিল এই পুজি । একদিন অপ্রত্যাশিতভাবে হঠাৎ যখন সাহিত্য-সেবার ডাক এলে, তখন যৌবনের দাবী শেষ করে প্রৌঢ়ত্বের এলাকায় পা দিয়েছি। দেহ শুস্তি, উদ্যম সীমাবদ্ধ—শেখৃবার বয়স পার হয়ে গেছে। থাকি প্রবাসে, সব থেকে বিচ্ছিন্ন, সকলের কাছে অপরিচিত, কিন্তু আহবানে সাড়া দিলাম—ভয়ের কথা মনেই হলো না । আর কোথাও না হোক, সাহিত্যে গুরুবাদ আমি মানি । >QQ