পাতা:স্বদেশ ও সাহিত্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বদেশ মনুষ্যত্বের আদশের অভিমান নিয়েও প্রকাশ করছিনে, আজ আমি নিতান্ত দায়ে ঠেকেই এ কথা বলছি । আজ র্যার স্বরাজ পাবার জন্যে মাথা খুড়ে মরছেন—আমিও তাদের একজন, কিন্তু আমার অন্তৰ্য্যামী কিছুতেই আমাকে ভরসা দিচ্ছে না। কোথায় কোন অলক্ষ্যে থেকে যেন তিনি প্রতি মুহূৰ্ত্তেই আভাস দিচ্ছেন এ হ’বার নয়। যে চেষ্টায়, যে আয়োজনে দেশের মেয়েদের যোগ নেই, সহানুভূতি নেই, এই সত্য উপলব্ধি করবার কোন জ্ঞান, কোন শিক্ষা, কোন সাহস আজ পর্য্যন্ত যাদের দিইনি, তাদের কেবল গৃহের অবরোধে বসিয়ে, শুদ্ধমাত্র চরকা কাটতে বাধ্য করেই এত বড় বস্তু লাভ করা যাবে না ! মেয়ে মানুষকে আমরা যে কেবল মেয়ে করেই রেখেছি, মানুষ হ’তে দিই নি, স্বরাজের আগে তার প্রায়শ্চিত্ত দেশের হওয়া চাই-ই। অত্যন্ত স্বার্থের খাতিরে যে দেশ, যেদিন থেকে কেবল তার সতীত্বটাকেই বড় করে দেখেছে, তার মনুষ্যত্বের কোন খেয়াল করেনি, তার দেনা আগে তাকে শ্যে করতেই হবে । এইখানে একটা আপত্তি উঠতে পারে যে, নারীর পক্ষে সতীত্ব জিনিষটা তুচ্ছও নয়, এবং দেশের লোক তাদের মা-বোন-মেয়েকে সাধ করে? যে ছোট করে’ রাখতে চেয়েছে তাও ত সম্ভব নয়। সতীত্বকে আমিও তুচ্ছ বলি নে, কিন্তু একেই তার নারী জীবনের চরম ও পরম শ্রেয়ঃ জ্ঞান করাকেও কুসংস্কার মনে করি। কারণ, মানুষের মানুষ হ’বার যে স্বাভাবিক এবং সত্যকার দাবী, একে ফাকি দিয়ে, যে কেউ যে কোন একটা কিছুকে বড় করে খাড়া করতে গেছে, সে তাকেও ঠকিয়েছে নিজেও ঠকেছে। তাকেও মানুষ হ’তে দেয়নি, নিজের মনুষ্যত্বকেও তেমনি অজ্ঞাতসারে ছোট করে ফেলেছে। ᎼᏬ