পাতা:স্বদেশ ও সাহিত্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষার বিরোধ · দেশ হারিয়েছিল তার নিজের দোষে। সেই ক্রটি সংশোধন করার বিদ্যে তার নিজের মধ্যেই ছিল, বিজেত। আফগানের কাছে শেখবার কিছুই ছিল না। আবার এমন দৃষ্টান্তও ইতিহাসে দুষ্প্রাপ্য নয় যখন বিজেতাই পরাজিতের কাছে কি বিদ্যা, কি ধৰ্ম্ম, কি সভ্যতা, কি ভদ্রতা সমস্তই শিক্ষা করে আর একদিন মানুষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কে বলেছে, সত্যকার বিদ্যা যদি কিছু তার থাকে তা শিখতে হবে না ? কে বলেছে, তার দ্বার পশ্চিমমুখে থাকায় তাকে অহিন্দু বলে’ বয়কট করতে হবে ? কি পদার্থবিদ্যা, কি রসায়ন শাস্ত্র, কি ধনবিজ্ঞান—এ সকল পশ্চিমি বিদ্যে শেখবার আবশ্যক নেই বলে’ কে বিবাদ করছে ? বিবাদ যদি কিছু থাকে সে তার বিদ্যার উপরে নয়—সে তার শেখানোর ভান করার ওপর, শিক্ষার বদলে কুশিক্ষার আয়তনের ওপর। এতকাল এই তামাসায় যোগ দিয়ে পাগলের মত সবাই নেচে’ বেড়াচ্ছিল, এখন হঠাৎ জনকয়েক লোকের চৈতন্য হওয়ায় তারা পেছিয়ে দাড়িয়ে এই ফাকিটাকে কেবল আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে—এই ত দেখি আসলে মতভেদের কারণ। এই বস্তুটাকেই একটু বিশদ করে দেখাবার চেষ্টা করা যাক । পশ্চিমের পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন শাস্ত্র যতখানি বেড়ে উঠেছে গত যুদ্ধের সময়, এতখানি এইটুকু সময়ের মধ্যে বোধ করি আর কখনো হয়নি। মানুষ মারবার নব নব কৌশল এর যত আবিষ্কার করেছে ততই আনন্দে, দম্ভে এদের বুক ভরে উঠেছে। এই বিজ্ঞানের সাহায্যে আগুন দিয়ে, বিষ দিয়ে পুড়িয়ে গ্রামকে গ্রাম, সহরকে সহর ধ্বংস করবার কত ফন্দিই না এর বা’র করেছে এবং আরও কত বা’র করত এই যুদ্ধটা আরও কিছুদিন অগ্রসর হ’লে । সৌভাগ্য এবং ২৭