পাতা:স্বদেশ ও সাহিত্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষার বিরোধ কিন্তু আমি একটু সরে গেছি। আমি বলছিলাম যে মানুষ কেবল সত্যকারের প্রয়োজনেই স্বষ্টি করতে পারে এবং কৃষ্টি করা ছাড়া সে কখনো সত্যকারের সম্পদও পায় না। কিন্তু পরের কাছে শিখে মানুষে বড় জোর সেইটুকুই তৈরী করতে পারে, কিন্তু তার বেশী সে হষ্টি করতে পারে না। স্বষ্টি করাটা শক্তি, সেটা দেখা যায় না-এমন কি পশ্চিমের দ্বারস্থ হয়েও না। এই শক্তির আধার নিজের প্রতি বিশ্বাস,—আত্মনির্ভরতা । কিন্তু যে শিক্ষা আমাদের আত্মস্থ হ’তে দেয় না, অতীতের গৌরব কাহিনী মুছে দিয়ে আত্মসম্মানে অবিশ্রাম আঘাত করে, কাণের কাছে কেবলি শোনাতে থাকে আমাদের পিতা পিতামহের কেবল ভূতের ওঝা আর মন্ত্ৰ-তন্ত্র, দৈবজ্ঞ নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন, তাদের কার্য্যকারণের সম্বন্ধ-জ্ঞান বা বিশ্বজগতের অব্যাহত নিয়মের ধারণাও ছিল না— তাই আমাদের এ দুর্দশা, তা’ হ’লে সে শিক্ষায় যত মজাই থাকৃ, তার সঙ্গে অবাধ কোলাকুলি একটু দেখে শুনে করাই ভাল । পশ্চিমের সভ্যতার আদর্শে মানুষ মারবার শত কোটী মন্ত্র-তন্ত্র, পরের দেশে তার মুখের গ্রাস অপহরণ করবার ততোধিক কলকারখানা, এ সমস্তই তার প্রয়োজনে তার নিজের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেচে,— কিন্তু ঠিক ঐ সকল আমাদের দেশের সভ্যতার আদশে প্রয়োজন কি ন৷ আমি জানি না । কিন্তু কবি বলেছেন, এই সকল মহৎ কার্য্য করেছে তারা নিশ্চয় কোন একটি সত্যের জোরে । অতএব ওটা আমাদের শেখা চাই, কারণ বিদ্যাটা তাদের সত্য । এবং পরক্ষণেই বলেছেন, কিন্তু শুধু তো বিদ্যা নয়, বিদ্যার সঙ্গে সঙ্গে শয়তানীও আছে, স্বতরাং শয়তানীর যোগেই ওদের মরণ। 8 S