পাতা:স্বদেশ ও সাহিত্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বদেশ করে ; সে আমাদের বে। নইলে দাদা কতখানি কি করতে পাৰ্বতেন, আমার ভারি সন্দেহ হয় । বাস্তবিক, নন-কো-অপারেশনের প্রথম হইতে ত অনেকই দেখিলাম, কিন্তু সমস্ত কিছুর অগোচরে এমন আড়ম্বরহীন শাস্ত দৃঢ়তা, এমন ধৈর্য্য, এমন সদাপ্রসন্ন স্নিগ্ধ মাধুৰ্য্য আর আমার চোখে পড়ে নাই। একান্ত পীড়িত স্বামীকে সে দিন শেষবারের মত কাউন্সিল ঘরে তিনিই পাঠাইয়াছিলেন । ডাক্তারদের ডাকিয়া বলিলেন, গাড়ী হউক, ষ্ট্রেচার হউক, যা হউক একটা তোমরা বন্দোবস্ত করিয়া দাও । উনি যখন মন স্থির করিয়াছেন, তখন পৃথিবীতে কোন শক্তি নাই ওঁকে আটকায় । হাটিয়া যাইবার চেষ্টা করিবেন, তার ফলে তোমরা রাস্তার মাঝখানেই ওঁকে হারাইবে । অথচ নিজে সঙ্গে যাইতে পারেন নাই, পথের দিকে চাহিয়া সারাদিন ছপ করিয়া বসিয়াছিলেন। ইংরেজীতে যাহাকে বলে scene creat করা, এই ছিল তাহার সব চেয়ে বড় ভয় । সৰ্ব্বলোকের চক্ষু তাহাতে আকৃষ্ট হওয়ার কল্পনামাত্রেই তিনি সঙ্কুচিত হইয় উঠেন। আজ এইটিই হইতেছে ভারতের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন গৃহে গৃহে যত দিন না এমনই সাধবী, এমনই লক্ষ্মী জন্মগ্রহণ করিবে, ততদিন দেশের মুক্তির আশা স্থদুরপরাহত। আজ চিত্তরঞ্জনের দীপ্তিতে বাঙ্গালার আকাশ ভাস্বর হইয়া উঠিয়াছে। কিন্তু দীপের যে অংশটা শিখ হইয়া লোকের চোখে পড়ে, তাহার জলার ব্যাপারে কেবল সেইটুকুই তাহার সমস্ত ইতিহাস নহে। তাই মনে হয়, সন্ন্যাসী চিত্তরঞ্জনকে রিক্ত করিয়া লইতেও ভগবান যেমন দ্বিধা করেন নাই, যখন দিয়াছিলেন, তখন কৃপণতাও তেমনই করেন নাই। - - - 8bア