পাতা:স্বদেশ ও সাহিত্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্মৃতিকথা পারিনে। বাঙ্গালী ভাবুকের জাত, বাঙ্গালী কৃপণ নয়। একদিন যখন সে বুঝবে, তার যথাসৰ্ব্বস্ব এনে আমাদের হাতে ঢেলে দেবে! এই সকল কথা বলিতে গেলেই উত্তেজনায় তাহার চক্ষু জলিয়া উঠিত। এই বাঙ্গলাদেশ ও এই বাঙ্গলাদেশের মানুষকে তিনি কি ভালই বাসিতেন, কি বিশ্বাসই করিতেন ! কিছুতেই যেন আর তাহদের ক্রটি খুজিয়া পাইতেন না। এ কথার আর উত্তর কি, আমি চুপ করিয়া রহিলাম। কিন্তু আজ মনে হয়, বাস্তবিক এতখানি ভাল না বাসিলে এই অপরিসীম শক্তিই বা তিনি পাইতেন কোথায় ? লোক র্কাদিতেছে— মহতের জন্য দেশের লোক ইতিপূৰ্ব্বে আরও অনেকবার কাদিয়াছে, সে আমি চিনি । কিন্তু এ সে নয় । একান্ত প্রিয়, একান্ত আপনারজনের জন্ত মামুষের বুকের মধ্যে যেমন জালা করিতে থাকে, এ সেই । আর আমরা, যাহারা তাহার আশে পাশে ছিলাম, আমাদের ভয়ানক দুঃখ জানাইবার ভাষাও নাই, পরের কাছে জানাইতে ভালও লাগে না । আমাদের অনেকেরই মন হইতে দেশের কাজ করার ধারন্মুট যেন ধীরে ধীরে অস্পষ্ট হইয়া গিয়াছিল। আমরা করিতাম দেশবন্ধুর কাজ। আজ তিনি নাই, তাই থাকিয়া থাকিয়৷ এই কথাই মনে হইতেছে, কি হইবে আর কাজ করিয়া ? তাহার সব আদেশই কি আমাদের মনঃপূত হইত ? হায় রে, রাগ করিবার, অভিমান করিবার জায়গাও আমাদের ঘুচিয়া গেছে! যেখানে এবং যাহাকে বিশ্বাস করিতেন, সে বিশ্বাসের আর সীমা ছিল না। যেন একেবারে অন্ধ । ইহার জন্য আমাদের অনেক ক্ষতি হইয়া গিয়াছে, কিন্তু সহস্র প্রমাণ প্রয়োগেও এ বিশ্বাস টলাইবার যো ছিল না। (? X